এসএসসি-এইচএসসি-থাকছে না জিপিএ-নম্বর আসছে চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন
এসএসসি-এইচএসসি-থাকছে না জিপিএ-নম্বর আসছে চিহ্নভিত্তিক মূল্যায়ন
ডেইলি চিরন্তনঃ অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী হাবিবা। পছন্দ করে ছবি আঁকতে। যে কাউকে সামনে বসিয়ে মুহূর্তেই তার প্রতিচ্ছবি পেন্সিলের কারুকাজে কাগজে ফুটিয়ে তোলে সে। কিন্তু গণিতে বড্ড কাঁচা। প্রচলিত শিক্ষায় পাস নম্বর বলতে যা বোঝায়, তাও টেনেটুনে তুলতে হাঁফিয়ে ওঠে। হাবিবার আগ্রহ চিত্রশিল্পী হওয়া। এসএসসি-এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে আঁকাআঁকি সম্পর্কিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চায় সে। বাবা-মায়েরও রয়েছে সম্মতি। তার ইচ্ছাপূরণে যেন বড় বাধা প্রচলিত শিক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি।
হাবিবার মা বলেন, ‘ও আঁকতে চায়, সুন্দর আঁকেও। চারুকলায় পড়ার স্বপ্ন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে তো এসএসসি-এইচএসসি পাস করতে হবে। অন্য দু-একটা সাবজেক্টে যে কাঁচা, তাতে পাস করবে কি না, তা নিয়ে যত চিন্তা।’ মায়ের এমন চিন্তার পাশাপাশি হাবিবা শিক্ষকদের থেকেও জেনেছে- বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার কোনো বিভাগে ভর্তি হতে হলে তাকে এসএসসি-এইচএসসিতে আগে ভালো ফল করতে হবে, যা নিয়ে মন খারাপ শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ছাত্রীর।
হাবিবার মতো প্রায় সব শিক্ষার্থী কোনো না কোনো বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। পাবলিক পরীক্ষায় খারাপ ফল করার কারণে এমন অনেক শিক্ষার্থীর মেধা ও দক্ষতা প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে না। ঝরে পড়ে অনেক মেধাবীরাও। এতদিন ধরে চলা শিক্ষাক্রমে যা ‘অতি বড় সংকট’ বলে বিবেচিত। প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রমে এমন সংকট থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনার চেষ্টা করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এ লক্ষ্যে এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন বাদ দেওয়া হচ্ছে। থাকছে না দুই যুগ ধরে প্রচলিত জিপিএ পদ্ধতিও। সমাপ্তি ঘটছে জিপিএ-৫ কিংবা গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার যুদ্ধেরও। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নে ব্যবহার হবে পারফরম্যান্স ‘ইনডিকেটর’, অর্থাৎ বিশেষ পারদর্শিতার ‘চিহ্ন’। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দিয়ে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন শুরু হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, ফল হিসেবে যে ইনডিকেটর বা চিহ্ন দেওয়া হবে, তা থেকে বোঝা যাবে- কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয় বা কাজে বেশি দক্ষ। ‘ভালো’, ‘মধ্যম’ বা ‘খারাপ’ ফল বলে কোনো কথা বা বার্তাও সেখানে থাকবে না। কোনো শিক্ষার্থী খেলাধুলায় পারদর্শী হতে পারে, কেউ হতে পারে ছবি আঁকায়। কারও কথা বলার দক্ষতা বেশি থাকতে পারে। তাদের এসব দক্ষতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ পছন্দ করে পড়তে উৎসাহ দেওয়া হবে। এতে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে দক্ষ ও আগ্রহী, সে বিষয়ে পড়বে এবং কর্মজীবনে সেই ক্ষেত্রেই কাজ করবে। চাকরির বাজারে বিষয়ভিত্তিক দক্ষ কর্মী বাড়লে, কমবে বেকারত্বও।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিপিএ পদ্ধতি যে থাকছে না, এটা আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হবে, সেটা নিয়ে আমাদের শিক্ষাক্রম প্রণেতারা কাজ করছেন। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভালো একটা মডেল দাঁড় করাবে বলে আশা করছি। ২০২৫ সালের আগেই আমরা এটাকে কাঠামোভিত্তিক মডেলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
জিপিএ পদ্ধতিটা ‘নন-সেন্স’
জিপিএ পদ্ধতিতে নম্বরের ওপর ভিত্তি করে গ্রেডে বিভক্ত করে ফল প্রকাশ করা হয়। যেমন- কেউ বাংলায় ৭০-৭৯ পেলে সেটাকে ‘এ গ্রেড’ এবং ৪.০০ পয়েন্ট ধরা হয়। গণিতে ৮০ বা তার বেশি পেলে ‘এ প্লাস’ গ্রেড এবং ৫.০০ পয়েন্ট ধরা হয়। প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে কোর্সের ক্রেডিট দিয়ে গুণ করে বের করা হয় তার যোগফল। এবার সব বিষয়ের ক্রেডিট যোগ করে ওই যোগফল দিয়ে গ্রেড পয়েন্ট বের করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত জিপিএ কত, তা উঠে আসে।
কেউ গোল্ডেন জিপিএ-৫ (সব বিষয়ে ৮০ নম্বরের ওপরে) পেলে তাকে সবচেয়ে মেধাবী বলে বিবেচনা করা হয়। আবার কেউ জিপিএ-৪ বা ৩.৫ পেলে তাকে ততটা মেধাবী নয় বা ফল ভালো হয়নি বলে বিবেচনার সংস্কৃতি বিদ্যমান। এটিকে ‘নন-সেন্স’ ও ‘ইডিয়টিং’, অর্থাৎ ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ ও ‘নির্বুদ্ধিতা’ বলে মনে করেন নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ করা অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান। তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য।
এ সংবাদটি এ পর্যন্ত 24 জন পাঠক পড়েছেন