বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সেলফিস থেকে সেলফি: মানসিক রোগের প্রকাশমাত্র Reviewed by Momizat on . ডেইলি চিরন্তন:সেলফি, আজকালকার ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে বহুল ব্যবহৃত একটা শব্দ। সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি যা প্রথম এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘সেলফিস’ থেকে। রবার্ট কার্নিলিয়াস ন ডেইলি চিরন্তন:সেলফি, আজকালকার ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে বহুল ব্যবহৃত একটা শব্দ। সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি যা প্রথম এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘সেলফিস’ থেকে। রবার্ট কার্নিলিয়াস ন Rating: 0
You Are Here: Home » ফিচার » সেলফিস থেকে সেলফি: মানসিক রোগের প্রকাশমাত্র

সেলফিস থেকে সেলফি: মানসিক রোগের প্রকাশমাত্র

imagesডেইলি চিরন্তন:সেলফি, আজকালকার ডিজিটাল প্রজন্মের কাছে বহুল ব্যবহৃত একটা শব্দ। সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি যা প্রথম এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘সেলফিস’ থেকে। রবার্ট কার্নিলিয়াস নামক এক ব্যক্তি ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম সেলফির ব্যবহার করেন।

বর্তমানে সেলফির প্রবণতা বা সচরাচর এর ব্যবহারের মাত্রা চরম পর্যায়ে। ফেসবুক এর আগে মাইস্পেস নামক সাইটে সেলফি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রাথমিক অবস্থায় সেলফি তরুণদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এটা প্রায় সর্বস্তরেই প্রচলিত। ক্যামেরা বা স্মার্টফোনের সামনের ক্যামেরা দিয়ে নিজের প্রতিকৃতি তোলাই হল সেলফি। ‘নিজেস্বী’ বা সেলফি হলো আত্ম-প্রতিকৃতি বা দলগত প্রতিকৃতির আলোকচিত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, গুগল+, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যপচ্যট ইত্যাদি সাইটে সেলফি ব্যাপক শেয়ার করা হয়ে থাকে।

1111111111111111111111111111111111111111২০১২ সালের শেষের দিকে টাইম ম্যাগাজিনের এক সমীক্ষায় বলা হয় সেলফি শব্দটি সেরা দশ শব্দের ভেতর একটি। ক্যামেরা ও স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের জরিপ মতে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের তোলা ছবির ৩০%ই সেলফি। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে সেলফি শব্দটি ২০১৩ সালে প্রথম সংযোজিত হয়।

বর্তমানে সেলফি নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই বেশ জনপ্রিয়। তবে অনেক সমাজবিজ্ঞানীর মতে সেলফির শুরু মূলত ‘পর্ন’ সংস্কৃতি থেকে। নিজের শরীর সুন্দরভাবে প্রদর্শনের মাধ্যমে অন্যকে আকৃষ্ট করার জন্যই মূলত মহিলারা সেলফি তুলতো। আকর্ষণীয়ভাবে নিজেকে উপস্থাপনই ছিল সেলফির মূল উদ্দ্যেশ্য। তবে ধারণামতে ২০১০ সালের পরে সেলফির প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে শুরু করে।

সুন্দর ও ভালো মানের সেলফি তোলার জন্য বাজারে চলছে বিভিন্ন ব্র্যন্ডের উন্নত ফ্রন্ট ক্যমেরা যুক্ত স্মার্টফোন। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে নানা ধরনের সেলফি স্টিকও এনেছে। যেগুলো দিয়ে স্মার্টফোন বা ক্যামেরার মাধ্যমে এক চাপেই নেওয়া যায় সুন্দর একটা সেলফি। শুধু সেলফি স্টিক নয়, আকর্ষণীয় সেলফি তোলার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেলফি অ্যাপস। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন স্মার্টফোনগুলোর অপারেটিং সিস্টেমে অ্যাপসগুলো চলে এবং সেলফি তুলতে দারুণ সুবিধাজনকও বটে। তন্মধ্যে সেলফি ক্যাম, ক্যান্ডিপিক, ইউক্যাম, সুইট সেলফি, রেট্রিকা, স্নো সেলফি, পারফেক্ট ৩৬০ বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া সুন্দর সেলফি তোলার জন্য অনেকে আলাদা পোশাকেরও ব্যবহার করে থাকেন।

ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া এই সেলফির রয়েছে নানা ভয়াবহ দিক। অনেক বিশেষজ্ঞই একে মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষকের গবেষণায় সেলফি সম্পর্কে উঠে এসেছে চমৎকার কিছু তথ্য। আর সেগুলো হলো, মানুষ সেলফি তোলার পর সেগুলো তার মুঠোফোনে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় এবং তারা আশা করে যে অন্যেরা তার সম্পর্কে মন্তব্য করুক। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হলো মানুষ ওইসব মন্তব্য থেকে নিজেকে যাচাই করতে শুরু করে।

ব্যক্তির নিজস্ব অবস্থানটা অন্যের বক্তব্যের ওপর ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে যেটা খুবই ভয়ংকর একটা বিষয়। যার ফলে তাদের নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস দিন দিন কমতে থাকে ও তাদের মগজে ভুল তথ্যের আধিক্য দেখা দেয়। কিছু মানুষ নিজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও অস্বাভাবিক হয়ে যেতে শুরু করে। কিছু মানুষের ভেতর সেলফি তোলা ও সেটা সামাজিক যোগাযেগ মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য এত উত্তেজনা কাজ করে যে তার অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের কথাও ভুলে যান।

আমেরিকার সাইকিয়াট্রিস্ট এসোসিয়েশন সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে সেলফি তোলা অবশ্যই একটি মানসিক রোগ। যার নাম দেওয়া হয়েছে সেলফাইটিস। নিজস্ব মানসিক সংযম ব্যতীত এর কোন ওষুধ নেই। এ রোগের চরম পর্যায় হলো “ক্রনিক সেলফাইটিস”। এই রোগে আক্রান্তরা দিনে পাঁচবারের বেশি বিরামহীন ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সেলফি তোলেন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন।

মূলত ১৩ থেকে ২২ বছর বয়সী টিনএজরা ‘ক্রনিক সেলফাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে হরহামেশাই মানুষ স্থান, আবহাওয়া, পরিস্থিতি বিবেচনায় না রেখে সেলফি তোলা শুরু করে যেটা অন্যের কাছে বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায়। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে ‘ফিলিং ব্লেজড, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ পোশাক পরিহিত মহিলার সঙ্গে সেলফি তুলে ‘ফিলিং লাভ’ ক্যপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা সত্যিই বিরক্তিরও বটে। অনেকে সেলফি আপলোড করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা মন্তব্যের আশায় বসে থাকেন। যার ফলে নষ্ট হয় তার মূল্যবান সময়। এটা ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

আকর্ষণীয় সেলফির জন্য ক্যামেরার সামনে অনেকে মুখ বিকৃতি করে থাকেন, মাঝে মাঝে এমন হাসি দেন যেটা বর্ণনার অতীত। এগুলো একপ্রকার প্রতিবন্ধী ভাবেরও পরিচায়ক। সেলফি থেকে সেলফিস হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। অন্যের ছবি কেমন হয়েছে সেদিকে খেয়াল না রেখে নিজেরটা কেমন হলো সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকে অনেকে। অন্যর ছবিটা কেমন আসলো সেটা চিন্তায় না রেখে নিজেরটা আপলোডে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

মাত্রাতিরিক্ত অপকারিতার মাঝেও সেলফির রয়েছে কিছু উপকারী দিক। প্রতিদিন সেলফি তোলা ও সেটা পরখ করে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া একপ্রকার উপকার বলেই বিবেচ্য। এ ছাড়া সেলফি ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রাণে আনন্দরসের সঞ্চার করে, জন্ম দেয় মানসিক প্রশান্তির। নিজের প্রতি যত্নশীলও করে তোলে।

About The Author

Number of Entries : 4058

Leave a Comment

সম্পাদক ও প্রকাশক মো: ইকবাল হোসেন
অফিস: ৯ নং সুরমা মার্কেট,৩য় তলা সিলেট।
ইমেইল-dailychironton@gmail.com
ওয়েব-www.dailychironton.com
মোবাইল-০১৭১৬-৯৬৯৯৭৮

© 2015 Powered By dailychironton.Designed by M.A.Malek

Scroll to top