কেউ স্পেন থেকে উড়ে আসছেন। কেউ আবার ইংল্যান্ড বা চীন থেকে পা রাখছেন দেশের মাটিতে। যে যেখান থেকেই আসছেন, সাংবাদিকেরা এগিয়ে এলে তাঁদের সঙ্গে দু-চারটে কথাও বলছেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। ফুরফুরে মেজাজ সবার।
আর্জেন্টিনা দলের চিত্রটা একটু ভিন্ন। খেলোয়াড়েরা বিমানবন্দরে নেমেই ফুড়ুৎ করে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যে ‘আড়ি’ এখনো চলছে তাঁদের।
দুই দলের খেলোয়াড়দের মেজাজ-মর্জির এই খণ্ড চিত্রগুলোই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের অবস্থা কিছুটা জানান দিয়ে দেয়। ১২ ম্যাচ শেষে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। পরশু ভোরে উরুগুয়ে আর এর চার দিন পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে জিতলেই প্রথম দল হিসেবে রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেবে তিতের দল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ফুটবল আকাশে রাশিয়ার টিকিট পাওয়া নিয়েই শঙ্কার মেঘ জমেছে। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে তারা। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে রাশিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চারটি দল। তালিকার পঞ্চম স্থানে থাকা দলটিকে খেলতে হবে প্লে-অফ।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে ঘরের মাঠে চিলির বিপক্ষে খেলা। গত বছর কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরের ফাইনালে এই চিলির কাছে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মেসিদের। চিলির ম্যাচের চার দিন পরই আর্জেন্টিনা লাপাজে খেলবে বলিভিয়ার বিপক্ষে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজারের ফুটেরও বেশি উচ্চতার কারণে লাপাজে খেলা যেকোনো সফরকারী দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ।
পরীক্ষার জন্য আর্জেন্টিনা কতটা প্রস্তুত? জানার কী আর উপায় আছে! এটা যাঁরা জানাবেন, সেই খেলোয়াড়েরা তো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাই বলছেন না। ২০১৬ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনার এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে অনুশীলনে এজেকিয়েল লাভেজ্জি গাঁজা টানছিলেন বলে লেখা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতার পর অধিনায়ক লিওনেল মেসি পুরো দল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। ঘোষণা দিয়ে যান, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা সাংবাদিকদের আর সঙ্গে কথা বলবে না।
পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটিও ব্রাজিলের জন্য বড় পরীক্ষাই। তার ওপরে খেলা উরুগুয়ের মাঠে। ব্রাজিল দলে এরপরও ফুরফুরে হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণ একটা আছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ম্যাচটিতে খেলতে পারবেন না উরুগুয়ের সেরা তারকা লুইস সুয়ারেজ। স্প্যানিশ লিগে খেলেন বলে হয়তো কাসেমিরো ভালো করেই জানেন, বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড সুয়ারেজকে আটকানো কতটা কঠিন। সুয়ারেজের না থাকা নিয়ে নিজের আনন্দ লুকাননি রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার, ‘এটা অস্বীকার করতে পারি না যে সুয়াররেজহীন উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য সুখবর। সুয়ারেজ অসাধারণ একজন খেলোয়াড়।’
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডিফেন্ডার ফিলিপে লুইস অবশ্য তারপরও কিছুটা সতর্ক, ‘সামনে কঠিন দুটি ম্যাচ আছে আমাদের। এর মধ্যে একটা তো বেশ কঠিন। তবে আমরা ভালো খেলছি। আর ম্যাচটি জেতার সামর্থ্যও আমাদের আছে।’
নেইমার দলে থাকলে ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে এমন আত্মবিশ্বাসী থাকাই যায়। বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রয়েছেনও দারুণ ছন্দে। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে অসাধারণ খেলেছেন। দুটি গোল তো করেছেনই, দুটি গোলে রেখেছেন বড় ভূমিকা।
ব্রাজিলের দুশ্চিন্তা একটাই—চোটের কারণে এই দুই ম্যাচের দলে নেই গাব্রিয়েল জেসুস। সবশেষ ছয় ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে অসাধারণ খেলেছেন এই তরুণ ফরোয়ার্ড। করেছেন চারটি গোল। তাঁর অভাব কীভাবে পূরণ করে ব্রাজিল, সেটা একটা দেখার বিষয় হতে পারে।
অবশ্য ছন্দে থাকলে নেইমার একাই যথেষ্ট যে কারও অভাব ভুলিয়ে দিতে!
সূত্র: রয়টার্স, গোলডটকম
Leave a Reply