তাইজুলের আঘাতে হ্যাজলউড আউট হয়ে যাওয়ার পর শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ান ইনিংস। টেস্টে পাঁচবারের দেখায় প্রথমবারের মতো অজিদের হারিয়ে নিজেদের জাত চেনায় টাইগাররা। গড়ে ইতিহাস।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দেয়া ২৬৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৪৪ রানেই অলআউট হয়ে পড়ে অজিরা। এর মধ্য দিয়ে হেড টু হেড পাঁচ ম্যাচে প্রথমবারের মতো হারের স্বাদ পায় স্মিথ বাহিনী।
এই টেস্টে জয় পাওয়ায় ১০১ টেস্টে বাংলাদেশ তুলে নেয় দশম জয়।
এর আগে সকালটা নিজেদের করে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান সাকিব-তাইজুলরা। একের পর এক আঘাতে স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে টলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালান তারা। তবে ওয়ার্নারের মারকুটে ব্যাটিং এবং স্মিথের যোগ্য সঙ্গ দিনটি বাংলাদেশের হবে না বলেই মনে করাচ্ছিল। ভাবনায় ছিল ফতুল্লার আক্ষেপেই নাকি পুড়ে মিরপুর টেস্ট।
তবে বিশ্বসেরার জাদু যে ছিল বাকি। সাকিব তার ঘূর্ণি জাদুতে মোহিত করে বিদায় দেন সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে। ১৬৪ বলে ১১২ রান করা ওয়ার্নার ফেরার পরেই উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেন টাইগাররা সদস্যরা।
এরপর আবার ছোবল হানেন সাকিব। ফিরে যান অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে সাকিবের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান তিনি।
ওয়ার্নার ও স্মিথ ফেরত যাওয়ার পর অনেকটাই স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে।
এরপর আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। ২৫ বলে ১৫ রান করা হ্যান্ডসকম্বকে ফেরান তিনি। স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার প্রথম চান্সে বলটি ছেড়ে দিলেও দ্বিতীয় চেষ্টায় লাফিয়ে ওঠা বলটি তালুবন্দি করেন সৌম্য।
৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব। সকালে বিপৎজনক হয়ে ওঠা সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড ওয়ানার্র ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে ফেরানোর পর আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েডকে ফেরান তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ওয়েড করেন ৪ রান।
আর লাঞ্চের আগে তাইজুল ঘূর্ণিতে উড়ে যান ২ রান করা আগার। তাইজুলের বলেই তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন আগার।
লাঞ্চের পরে ফিরে এসেই সাজঘরে ফিরে টাইগারদের জয়ের সুবাতাস পাইয়ে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন ১৪ রান করা ম্যাক্সওয়েল।
এদিকে ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়ে ফের ৫ উইকেট নেয়ার অনন্য নজির গড়লেন সাকিব।
আর ম্যাচে নিলেন ১০ উইকেট! টেস্টে এনিয়ে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট পেলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
এর পর মেহেদী মিরাজের আঘাতে ফিরে যান নাথান লিয়ন। ১২ রান করা লিয়ন ফিরে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া হারায় নবম উইকেট।
সর্বশেষ তাইজুল আঘাতে শূন্যরানে হ্যাজলউড ফিরে গেল বাংলাদেশ গড়ে ইতিহাস।
অজিদের হয়ে ওয়ার্নার করেন ১১২, স্মিথ ৩৭ এবং কামিন্স অপরাজিত ৩৩ রান।
সাকিব নেন ৫ উইকেট, তাইজুল ৩ ও মিরাজ নেন ২ উইকেট।
এর আগে টাইগাররা তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ২২১ রানে শেষ করে, আগের ৪৩ রানের লিডসহ অজিদের সামনে দাঁড়ায় ২৬৫ রানের টার্গেট। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে উল্লেখযোগ্য রান করেছেন তামিম ইকবাল ৭৮, মুশফিক ৪১। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ন্যাথান লিওন ৬ উইকেট দখল করেন।
এর আগে রোববার টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানে অলআউট হয়। দলের পক্ষে সাকিব ৮৪ এবং তামিম ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পেট কামিন্স, নাথান লায়ন ও অ্যাস্টন আগার প্রত্যকেই ৩টি করে এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১টি উইকেট লাভ করেন।
জবাবে ম্যাট রেনশ এবং শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ২১৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। রেনশ ৪৫, হ্যান্ডসকম্ব ৩৩, পেট কামিন্স ২৫, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২৩ এবং অ্যাস্টন আগার ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান ৫টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি এবং তাইজুল ইসলাম ১টি উইকেট লাভ করেন।
Leave a Reply