‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়/তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়/ পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহু কুহু কুহু গায়/ কি জানি কিসেরি লাগি প্রাণ করে হায় হায়!’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালোবাসা পাওয়ার এমন আকুতি প্রতিটি মানব হৃদয়েরই না বলা কথাগুলোকেই যেন বলে দেয় অকপটে। প্রিয় মানুষটিকে না বলা কথাগুলো বলে দিতেই শনিবার ভালোবাসা দিবসে চলমান অস্থিরতাকে দূরে ঠেলে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা দিবসটিকে উদযাপন করে পরম আনন্দে।
বসন্তের দ্বিতীয় দিন খানিকটা হিম বাতাসের মধ্যে সকাল থেকেই রাজধানীর রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন, ধানমণ্ডি রবীন্দ সরোবর, শিশুপার্ক, আবাহনী মাঠসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মনের মতো করে সেজেগুঁজে তরুণ-তরুণীরা বেরিয়ে পড়ে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে। মেয়েরা পরেছিল লাল শাড়ি। খোঁপায় ছিল ফুল। আর ছেলেরা পরেছিল লাল পাঞ্জাবি। প্রায় সবার হাতেই ছিল প্রিয় মানুষটির দেয়া গোলাপ। অনেককে আবার দেখা গেছে আগের দিনের ফাল্গুনী সাজেই। বসন্ত বরণের আমেজ শেষ না হতেই ভালোবাসা দিবসের আগমন যেন হাজারও বৈরিতা আর হিংসা ভুলিয়ে সবাইকে নিয়ে গিয়েছিল এক সাম্যের রাজ্যে।
দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কেউ কেউ প্রিয় মানুষটির জন্য কিনেছেন পছন্দের উপহার। ভালোবাসার কার্ড, পারফিউম, চকোলেট, পরিধেয় থেকে শুরু করে তালিকায় ছিল বইও। অন্যান্য দিনের চেয়ে বইমেলায় যুগলদের পদচারণা ছিল কিছুটা বেশি। কথা হয়েছিল মেলায় বই কিনতে আসা এমনই এক জুটি রাবিন-পলির সঙ্গে। রাবিন জানালেন, তাদের সম্পর্কের বয়স দশ বছর পেরিয়ে এগারোতে পা দিয়েছে। দীর্ঘ সময়ের এ যাত্রায় প্রেম-প্রণয়ের মাধ্যমে তারা সংসার জীবনে প্রবেশ করেছেন। আজকের ভালোবাসা দিবসটিতে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতেই এখানে আসা। পলি বলেন, ভালোবাসা কখনোই একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। ওঁর প্রতি ভালোবাসাটা কখনোই বলে বোঝাতে পারব না। নানা ব্যস্ততায় ভালোবাসার কথা বলা হয়ে ওঠে না সব সময়। তাই তো বিশেষ দিনটিতে ঘুরতে বেড়ানো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কথা হয় আরেক জুটি আসিফ-রওশনের সঙ্গে। আসিফ জানায়, তাদের সম্পর্ক প্রায় তিন বছর ধরে। দিনটিকে নিজেদের মতো করে কাটাতেই শহরের মুক্ত স্থানে আসা। রওশন জানান, আসিফের প্রতি তার ভালোবাসা ও অগাধ বিশ্বাস সব সময়ের। ভালোবাসা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে নিয়ে বের হওয়া।
দিনটিতে যুগলের পাশাপাশি পরিবারসহ ঘুরতে বের হওয়া মানুষের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ গাড়িতে, কেউ সিএনজি নিয়ে, কেউ রিকশায়, কেউ বা আবার হেঁটেই বেরিয়ে আসেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কিছু একান্ত সময় কাটাতে। এভাবেই বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। দেশের চলমান অস্থিরতাকে জয় করে দূরে ঠেলে পরম আনন্দ উল্লাসে দিনটি কাটায় সবাই।
এদিকে দিবসটিকে কেন্দ্র করে শাহবাগসহ নগরীর বিভিন্ন ফুলের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শহরের ফুটপাতে বসে ফুচকা, চটপটি, বাদাম, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর ভ্রাম্যমাণ দোকান। এছাড়া উৎসবপ্রিয় মানুষের নিরাপত্তায় সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সব মিলিয়ে ভালোবাসা দিবস যেন আমাদের এ বার্তাই জানান দিয়ে যাচ্ছে, সহিংসতা সংঘাতে নয়, ভালোবাসাতেই মুক্তি। – See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2015/02/15/220913#sthash.b0UGFBNi.dpuf
Leave a Reply