ছোট হতে পারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি। বর্তমানে ৩৮৬ সদস্যের বিশাল কমিটি। ৩০১, ২৫১ কিংবা ২০১ সদস্যের মধ্যে রাখার চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। যদিও তা কঠিন বলে মনে করছেন দলের একাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিটিকে কার্যকর ও জবাবদিহিতায় নিয়ে আসতে আকার ছোট করার বিকল্প নেই। সম্প্রতি গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির বৈঠকেও ছোট কমিটির কথা বলেছেন কয়েকজন নেতা। আবার বড় করার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। তবে কমিটি ছোট হোক বা বর্তমান সংখ্যাই থাকুক, তাতে ঝরে যাবেন নির্বাহী কমিটির বেশ কিছু নিষ্ক্রিয় সদস্য। তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। এ নিয়ে নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে হতাশা লক্ষ করা গেছে। আগামী শনিবার গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির বৈঠকে দলের নেতৃত্বের আকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত আন্দোলনে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার চিন্তা করছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইঙ্গিত পেয়ে সক্রিয়দের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেকে। বিষয়ভিত্তিক কমিটি করার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এ কমিটির অধীনে উপ-কমিটি থাকবে। সেখানেও নেতাদের একটি অংশকে যুক্ত করা হবে। উপ-কমিটির সদস্যদের নির্বাহী কমিটির মর্যাদা দিতে গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথাও বলছেন দলের নেতাদের একটি অংশ। কমিটির আকার প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাহী কমিটির আকার কী হবে, তা এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের জায়গায় সক্রিয়দের নিয়ে আসা হবে। বিষয়ভিত্তিক কমিটির প্রস্তাবনা আসছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। জানা যায়, অনেকটা গোপনীয়ভাবেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থান নেওয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। নিষ্ক্রিয়দের সাইড লাইনে রাখা হচ্ছে। সক্রিয়দের পৃথক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপি প্রধান একাধিকবার বলেছেন, আন্দোলনের সময় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা পদ না থাকার পরও কাজ করেছেন। তাদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। নির্বাহী কমিটির অগ্রভাগে তাদের রাখা হবে। সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদে নেই। তাদেরও কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হবে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপিকে অক্টোপাসের মতো বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার। হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের শিকার সারা দেশের নেতা-কর্মীরা। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। তবে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দেওয়া কিংবা সক্রিয়দের সামনে নিয়ে আসা রাজনীতির একটি অংশ।’
সোহরাওয়ার্দী ব্যবহারের পুলিশি অনুমতি মেলেনি : রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। কিন্তু স্থান সঙ্কুলান না হওয়ার শঙ্কায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পুলিশের কাছেও আবেদন করা হয়েছে। গণপূর্ত থেকে অনাপত্তি পেলেও এখনো কিছুই বলছে না পুলিশ। গতকাল দুই দফা ডিএমপিতে গেছেন বিএনপির তিন নেতা। দলের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ও সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি যান সেখানে। কিন্তু হরতালের কারণে কোনো সিনিয়র কর্মকর্তার সাক্ষাত্ পাননি তারা। আজ আবারও ডিএমপিতে যাবে বিএনপির প্রতিনিধি দল।
সেই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে : কাউন্সিলের আগে বিএনপির তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। কাউন্সিলের আগেই তাদের পর্যায়ক্রমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা হলেন— নড়াইল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল কবির, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সলিমুল্লা টিপু, রাজশাহীর নওহাটা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং আড়ানী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম মাস্টার। এ ছাড়া মো. আশরাফ উদ্দিন খানকে সভাপতি, ডা. মো. আনোয়ারুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং এস এম মনিরুজ্জামান দুদুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে।
Leave a Reply