আফগানিস্তানে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের দুই বাংলাদেশী কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেছে একদল বন্দুকধারী।
তারা হলেন প্রধান প্রকৌশলী হাজি শওকত আলী (৫০) ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সুমন (৩৮)। তাদের দু’জনেরই বাড়ি পাবনা জেলায়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুন্দুজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ব্র্যাকের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সাবেরা গুলরুখ বলেন, কুন্দুজ থেকে বাগলান যাওয়ার পথে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থেকে নামিয়ে একদল বন্দুকধারী তাদের নিয়ে যায়।
তিনি জানান, পরে স্থানীয় পুলিশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দু’জনকে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছে তারা।
ইতিমধ্যে তাদের বহনকারী ওই গাড়িতে থাকা এক আফগান নাগরিক ও চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান সাবেরা গুলরুখ।
তবে এর সঙ্গে তালেবান জঙ্গিরা জড়িত কি না সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুগান্তরের পাবনা প্রতিনিধি জানান, অপহৃতদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম সুমন পাবনা জেলার সদর উপজেলার দুবলিয়া গ্রামের এজেম উদ্দিন খানের ছেলে। অন্যজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
অপহৃত সুমনের বড় ভাই আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক আবদুল খালেক খান যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার সুমন এবং তার সহকর্মী হাজী শওকত আলী অফিসিয়াল গাড়িতে কুন্দুজ প্রদেশ থেকে বাগলান আসছিলেন।
পথে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি গাড়িতে করে ৫/৬ জনের অচেনা অস্ত্রধারী তাদের গাড়িকে ব্যারিকেড দিয়ে থামায়। এরপর ওই গাড়ি থেকে সিরাজুল ইসলাম সুমন ও ইঞ্জিনিয়ার হাজি শওকত আলীকে নামিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অপহৃতদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
আব্দুল খালেক আরও জানান, গত ১০ বছর ধরে সুমন ব্র্যাকে কর্মরত। আফগানিস্তানে রয়েছে প্রায় ৪ বছর। সেখানে সে আঞ্চলিক হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত।অপহরণের পরপরই সেদেশের স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাদের মাধ্যমে দূতাবাসকেও জানানো হয়েছে বলে সুমনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
এদিকে সুমনের অপহরণের খবরে তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী লতা (২২), পিতা-মাতাসহ আত্মীয়-স্বজনেরা ভেঙে পড়েছেন। তারা অবিলম্বে অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ২০০২ সালে কাজ শুরু করে। দেশটির ৩৪টি প্রদেশে ব্র্যাকের প্রায় ৪০০ অফিসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের কাজে রয়েছেন বাংলাদেশী কর্মীরা।
তারা প্রায়ই হামলা ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন। ২০১২ সালের মে মাসে দেশটির ঘোর প্রদেশে ব্র্যাকের একটি কার্যালয়ে ঢুকে এক কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ব্র্যাকের এক প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়। সেখান থেকে অপহরণ করা হয় ৬ জনকে। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে গুলিতে নিহত হন আরেক ব্র্যাক কর্মকর্তা।
২০০৭ সালে অপহৃতের ৮৩ দিন পর মুক্তি পান নূরুল ইসলাম নামে এক ব্র্যাক কর্মকর্তা। আর ২০০৮ সালের অক্টোবরে গজনি প্রদেশ থেকে অপহৃত হন ২ জন। ১০ দিন পর তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
Leave a Reply