ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ছবি ‘শঙ্খচিল’ সদ্য সেরা বাংলা ছবির জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এমন সাফল্যের দিনেও টালিগঞ্জের রথী-মহারথীরা কিন্তু দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকিয়ে। দক্ষিণী ‘বাহুবলী’ই যে এ বার জিতে নিয়েছে দেশের সেরা ছবির শিরোপা। মঙ্গলবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশন বিভাগের অনুষ্ঠানে ‘শঙ্খচিলে’র অভিনেতা প্রসেনজিৎ বললেন, ভারত ও বাংলাদেশের ফিল্মি বাজার মেলাতে পারলে বাঙালিও তাদের ‘বাহুবলী’ তৈরি করতে পারবে।
১২০ কোটির ছবি ‘বাহুবলী’ ব্যবসা করেছে অন্তত ৬০০ কোটি। একসঙ্গে তেলুগু ও তামিল সংস্করণে তৈরি ছবি হিন্দি, মালয়ালম ও ফরাসিতে ডাব করা হয়েছে। টালিগঞ্জে ছবির বাজেট দেড়-দু’কোটি ছাড়ালেই প্রযোজকের নাভিশ্বাস ওঠে। বাংলাদেশে ৮০ লক্ষের বেশি টাকায় ছবি করার ঝুঁকি নেন খুব কম প্রযোজক। হলের সংখ্যা মাপলেও অন্ধ্র বা মহারাষ্ট্রের সঙ্গে এ পার বাংলা ধারেকাছে আসে না। এখানে মাল্টিপ্লেক্স ২০-২৫টি। অন্ধ্র বা মহারাষ্ট্রে ১০০-র কাছাকাছি। অথচ গোটা বিশ্বে বাংলাভাষীর সংখ্যা যে কোনও দক্ষিণ ভারতীয় ভাষার জনগোষ্ঠীর থেকে ঢের বেশি। কিন্তু দুই বাংলায় বাঙালির রাজনৈতিক বিভাজন যেন সাংস্কৃতিক বিভাজনও ঘটিয়েছে। তাতে দুই বাংলার ফিল্ম ব্যবসাই মার খাচ্ছে বলে স্বীকার করেন ঢাকা-কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির লোকজন।
বাংলাদেশের তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি আইনি জটিলতা ঢিলে করে দু’দেশের যৌথ প্রযোজনার ছবিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একাংশের অবশ্য একটু দ্বিধা আছে। তাঁদের আশঙ্কা, টালিগঞ্জের উন্নত মানের বাংলা ছবি বাংলাদেশে ঢুকলে স্থানীয় ছবির বিপদ। ‘শঙ্খচিল’-এর পরিচালক গৌতম ঘোষ তাই মনে করছেন, দুই বাংলায় একসঙ্গে ছবির মুক্তি ঘটাতে পারলে যে কোনও ছবিই লাভবান হবে। টালিগঞ্জের ফিল্ম পরিবেশক অরিজিৎ দত্তেরও মত, ‘‘দুই বাংলার বক্সঅফিসের চরিত্রে ফারাক থাকলেও রিলিজ-এর সময়ে বুদ্ধি করে চলতে হবে। তাতে দুই বাংলাতেই যে কোনও ছবির ভাল করার রাস্তা খুলবে।’’ এটা মাথায় রেখেই দু’দেশের আমদানি-রফতানি আইন অনুযায়ী দুই বাংলার ছ’টি করে ছবি দু’দেশে ‘রিলিজ’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিনেমাতুতো যোগাযোগ বাড়াতে দু’দেশের আইনি জট দূর করার চেষ্টা জারি রয়েছে।
যাদবপুরে এ দিন দেশভাগ ও সিনেমা নিয়ে আলোচনার আসরে বাঙালির বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণাও উঠে আসছিল। ‘শঙ্খচিল’-এর একটি চরিত্রের অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী যেমন বলছিলেন, সে-যন্ত্রণা এই প্রজন্মের মধ্যেও প্রবহমান। ইউরোপের দেশগুলোর আদলে দুই বাংলার মধ্যেও তাই জটিলতাহীন ‘সিমলেস বর্ডার’-এর স্বপ্ন দেখেন গৌতম। বললেন, ‘‘রাজনৈতিক অস্তিত্ব আলাদা হলেও অখণ্ড বাঙালি সাংস্কৃতিক সত্তা গড়ে তোলার কাজ করতে পারে সাহিত্য বা সিনেমা।’’ যৌথ প্রযোজনার ছবি তাই একাধারে বাণিজ্য ও সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা মাথায় রেখেই ঠিক হয়েছে পয়লা বৈশাখ একযোগে দুই বাংলাতেই মুক্তি পাবে ‘শঙ্খচিল’।
Leave a Reply