কুমিল্লা সেনানিবাসে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা ‘ধামাচাপা দিতে’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।
নাজিম হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, ‘সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো।’
নাজিম হত্যার দায় সরকারের ওপরই বর্তায়— এমন মন্তব্য করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘দেশে যে শাসন চলছে, তা কোনোভাবেই গণমানুষের আকাঙ্খার শাসন নয়। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে, আর আপনারা একদিন আনসারুল্লাহ, একদিন অমুক, একদিন তমুককে দায়ী করে ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন, অপরাধীদের ধরায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই আমাদের সন্দেহ জাগে, এই হত্যার পেছনে এমন কেউ আছে, যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কালো চশমা পরে আছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি দাবি করে থাকে যে জঙ্গিগোষ্ঠী এই খুন করেছে, তাহলে খুনিদের গ্রেফতার করে তারপর তাদের প্রমাণ করতে হবে কারা জড়িত। অপরাধীদের গ্রেফতারের কোনো চেষ্টা না করে বারবার একই স্ক্রিপ্ট পড়ে পার পেয়ে যাবেন, আমরা তা মেনে নেবো না।’
ডা. ইমরান বলেন, ‘নাজিমুদ্দিন সামাদ সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে স্বপ্ন নিয়ে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন, চাপাতির আঘাতে, পিস্তলের গুলিতে সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। শুধু সামাদই নন, কিছুদিন আগে খুন হয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার যাজক। একটির পর একটি ঘটনা ঘটে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘একের পর এক ঘটনার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারাদেশে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়েও বাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীদের ধরার কোনো চেষ্টা না করে প্রশাসন বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে।’
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, “অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার এক নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। প্রতিটি খুনের পর বলা হচ্ছে অপরাধীরা ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে পালিয়ে গেছে। একটা সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে দেখিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগানের কথা তুলে দুইটি পক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপে ব্যস্ত থাকছে, আর এই ফাঁকে সরকারি লোকজন ব্যস্ত রিজার্ভ লুটে। অপরাধীদের আর বিচার হচ্ছে না।’
এইচ সরকার বলেন, ‘শুধু ব্লগার-লেখক নয়, নানা ধরনের মানুষ খুন হচ্ছেন। নাজিমুদ্দিন সরকারি দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তারপরও শুধু অন্যায়ের সাথে আপোষ না করায়, ওলামা লীগের বিরুদ্ধে বলায় তাকে খুন হতে হলো। তাই আমাদের সন্দেহ হয়, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নাকি ওলামা লীগ! আওয়ামী লীগ অন্যদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরোধিতা করে। আমাদের প্রশ্ন, ওলামা লীগ তাহলে কী করছে? ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কেন তারা কথা বলেন না? সরকার ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ওলামা লীগের চেতনায় প্রবেশ করছে। নাজিমুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতো, তারপরও রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ আর হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে খুন হতে হলো।’
গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন মারুফ রসূল, সঙ্গীতা ইমাম, বাকি বিল্লাহ, শম্পা বসু, ভাস্কর রাসা প্রমুখ।
সমাবেশে শেষে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে ঘুরে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
Leave a Reply