বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র (ROANU) প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৭ নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
একই কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ এবং খুলনা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চারটি সমুদ্রবন্দরেই ৪ নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি ছিল।
সেটি নামিয়ে শুক্রবার বিকালে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়ার ১২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এই বিপদ সংকেত জারি করা হয়।
পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ (ROANU) সামান্য উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
এটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল শনিবার বিকাল অথবা সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে বলেও বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
এর ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আগের ৪ নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে ৭ নং বিপদ সংকেত জারি করে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে এই সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
একইভাবে কক্সবাজারে ৬ বিপদ সংকেত জারি করে কক্সবাজার, এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে এই সংকেতের এবং খুলনা ও মংলা সমুদ্রবন্দরে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করে উপকূলীয় ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকে এই সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
একইভাবে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলের সব সরকারি ও আধা-সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে সরকার। একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে সাইক্লোন সেন্টারগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়াবিদদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এই ঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘রোয়ানু’। নামটি মালদ্বীপ প্রস্তাব করেছিল।
Leave a Reply