বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
‘রোয়ানু’ মূলত শুক্রবার মাঝরাতে উপকূলে আঘাত হানে। এর প্রভাবে তখন থেকে উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় পর্যন্ত পাওয়া খবরে ২১ নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১০ জন, কক্সবাজারে ২ জন, নোয়খালীতে ৩ জন, লক্ষীপুরে ১ জন, ফেনীতে ১ জন, ভোলায় ৩ জন ও পটুয়াখালীতে ১ জন নিহত হন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঞ্জল সলিমপুরে গাছচাপায় শনিবার ভোররাতে মা কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে মো. বাবু (১০) নিহত হয়েছেন। নিহতরা ওই এলাকার মো. রাফিকের স্ত্রী ও ছেলে।
চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকায় বেলা ১২টার দিকে আম কুড়াতে গিয়ে ভবন থেকে ইট পড়ে রাকিব (১১) নামে এক শিশু মারা যায়।
এদিকে ঝড়ে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা, আলোকদিয়া, খাটখালী, গন্ডামারা বাজার, প্রেমাশিয়া, ছনুয়া ও খুদুকখালি এলাকায় বেড়ি বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে।
এতে সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
প্রাথমিকভাবে নিহতদের মধ্যে উপজেলার প্রেমাশিয়া ইউনিয়নের রোষাঙ্গিপাড়ার বৃদ্ধ আবু সিদ্দিকের (৬৫) নাম জানা গেছে।
কক্সবাজার
কক্সবাজারে ঝড়ের সময় দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন- উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)।
এক ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জানান, ইকবাল দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল নৌকার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।
তিনি জানান, ঝড়েরর সময় আহতদের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পাঁচজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার সাড়ে ২৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ কোথাও আংশিক ও কোথাও সর্ম্পূণ ধসে গেছে।
নোয়াখালী
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে শনিবার বিকালে প্রবল জোয়ারে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মা ও মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইন উদ্দিন।
তিনি জানান, নিহতরা হলেন ২নং চানন্দী ইউনিয়নে নলের চর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫) এবং তার মেয়ে মরিয়ম নেছা (১০) এবং জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে চরহেয়ার গ্রামের সালাউদ্দিন ব্যাপারীর স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৪৭)।
লক্ষ্মীপুর
ঘূর্ণিঝড়ের গাছ উপড়ে পড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) নামে একজন নিহত ও আরও একজন আহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাজ্জাদুর হাসান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়বে বলে জানানও সাজ্জাদুর হাসান।
ফেনী
ঘূর্ণিঝড়ের সময় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকায় চর থেকে মহিষ আনতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নুরুল আলম (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফা হক। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
ভোলা
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলায় তিন জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে তজুমদ্দিন উপজেলায় ঘরচাপায় নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক লোকজন। ঝড়ে উপজেলার বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিধ্বস্ত হয়েছে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ গ্রামের নয়নে স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)। দুজনের বাড়ি উপজেলার শশীগঞ্জ গ্রামে।
ভোলার মনপুরায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সামিয়া (৩ দিন) নামে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আর্দশ গ্রামের তসলিমের মেয়ে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয় বলে জানান ইউপি সদস্য মো. সোহেল।
এছাড়াও ‘রোয়ানু’র আঘাতে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ৫-৬ ফুট জোয়ারে পানি প্রবেশ করে। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর দশমিনায় ঘূর্ণিঝড়ে শনিবার সকালে নয়া বিবি (৫২) নামে এক গৃহবধূ ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরচাপায় নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের সুন্দর আলীর স্ত্রী।
জেলার রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলায় বেশকিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
Leave a Reply