যারা প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তারাই এখন পথ পরিবর্তন করে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার দুপুরে গণভবনে সম্প্রতি করা বেশ কয়েকটি দেশের সফর সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এসপি স্ত্রী, পুরোহিতসহ নানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট। আমার কাছে সব তথ্য আছে। আমরা সূত্র ধরেই কথা বলি। সব গুপ্তহত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। জঙ্গি যে দলেরই হোক না কেন, তারা পার পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্নজন এ হত্যার দায় স্বীকার করে। মূল জায়গা কিন্তু একটা। মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী স্লোগান নিয়ে যারা মানুষ হত্যাকে উস্কে দেয়, বর্তমানের গুপ্তহত্যা তাদের কাজ। দেশের অগ্রযাত্রা রুখতেই এই নীলনকশা। এ যাবত যারাই জঙ্গী তৎপরতা চালিয়েছে তাদের সঙ্গে দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্রব পাওয়া গেছে। তারা প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ পুড়িয়ে মারে, তখন তারা জনগণের রুদ্ররোষের শিকার হয়েছিল। যার কারণে এখন তারা মানুষ হত্যার কৌশল পরিবর্তন করেছে। সরকারও বসে নেই। আমাদের যা যা করণীয় আমরা তা করে যাচ্ছি। যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে আমরা তাদের ধরতে সক্ষম হচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, এটা যারা চায় না, তারাই এই গুপ্তহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করছে। তবে দেশের সব মানুষ সচেতন থাকলে কারো কোনো নীলনকশাই বাস্তবে রূপ নেবে না।
এসময় সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে নেই। এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারার সময় দেশবাসী যেমন উঠেছিলেন; ঠিক সেভাবেই আবার জেগে উঠতে হবে। গুপ্ত হত্যাকারীদের বিষয়ে সমগ্র দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাদের খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। এভাবে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে ইসলামকেই ছোট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মের নামে যারা হত্যা চালায়, তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ অমান্য করে।
দেশের সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যেন নিজ নিজ পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী পথে যাচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব নেন।
সংবাদ সম্মেলনে লন্ডন সফর, বুলগেরিয়ায় গ্লোবাল উইমেন লিডারস ফোরামে যোগদান, সৌদি আরব সফর, উমরাহ পালন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে শুধু শ্রমিক নয়, দক্ষ পেশাজীবী যেমন—চিকিৎসক, প্রকৌশলী, নার্সও নেবে। এ ছাড়া সৌদি আরবে অবস্থিত কাবা শরিফের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সফরে সৌদি আরবের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসবে দেশটির একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল। সৌদি আরবে বড় পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এখন বিনিয়োগে আগ্রহী।
এবার তার সৌদি আরব সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। আমরা সেখানে আরও লোক পাঠাতে পারবো। যারা সেখানে যাবেন তাদের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি বাদশাহসহ অনেক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা আমাদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমারা তাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি- আমরা তাদের জায়গা দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশা। আমি তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। বাদশাকে আমি জানিয়েছে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সামরিক সহায়তা দেবে।
এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন হওয়ায় দেশে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ বেড়েছে। দেশে ইউপি নির্বাচন চলাকালে যে সহিংসতা হয়েছে তার বেশির ভাগই হয়েছে ইউপি সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে।
Leave a Reply