সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সদ্য সমাপ্ত আসেম সম্মেলন নিয়ে রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো মনে করি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে। যারা সন্ত্রাসী, জঙ্গি, পুড়িয়ে মানুষ মারে অথবা যুদ্ধাপরাধী তাদের কথা আলাদা।’
তার মতে, ‘যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য গড়ে ওঠেছে। এই ঐক্য থাকবে, এটা হলো বাস্তব। সর্প হইয়া দংশন করবে আর ওঝা হইয়া ঝাড়বে- তা হবে না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার আহ্বানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনেও প্রশ্ন জাগে- তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে, মদদ দিয়ে যাবে?’
সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনা কিন্তু অনবরত ঘটে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশের ঘটনা না। এটা বিশ্বব্যাপী, উন্নত দেশগুলোতেও হচ্ছে। কোথায় কিভাবে হচ্ছে, তথ্য বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সহযোগিতা সবাইকে সবাই করতে হবে। এটা মোকাবেলার বিষয়ে আসেমে আমরা বলেছি- যে যা তথ্য পাই, আদান-প্রদান করে এর মোকাবেলায় যা যা করার আমরা করব। আমি বলেছি- সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘নিশা দেশাই (মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যখন এসেছে, তখনও আমি বলেছি- আমাদের প্রথমে লাগবে ইন্টিলিজেন্স ইরফরমেশন। এটা তাদের শক্তিশালী।’
‘এজন্য আমরা তথ্য চাই- কে করেছে? কেন করেছে? কোত্থেকে এগুলো হচ্ছে? এটা শুধু বাংলাদেশের না, যেখানে যেখানে এগুলো হচ্ছে সবাই মিলিতভাবে এগুলো মোকাবেলা করবে, তথ্য শেয়ার করবে’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদায় কিছুটা ভাটা পড়েছে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘গুলশানের ঘটনা ভিন্ন মাত্রায় হয়েছে। অনেক বিদেশী মারা গেছে। একেবারে সম্মান হারিয়ে ফেলেছি তা না। এখন সম্মান হারালে সারা বিশ্বই হারাবে; সব যায়গাই হামলা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কষ্ট লেগেছে এজন্য যে, আমি এত কষ্ট করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিলাম। এখন এ ঘটনাটা আমাদেরকে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নে ফেলে দিল।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘এগুলো (সন্ত্রাসী হামলা) প্রতিরোধে পরিবারগুলোকে সচেতন করতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান জানিয়েছি, তারা মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি করছে। আমাদের শিক্ষকরা সচেতন করছে। মন্ত্রণালয়গুলো তাদের নিয়ে বসছে। এভাবে আমরা কতগুলা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।’
এসব হামলার তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি অনেক কাজ হচ্ছে, তদন্তের স্বার্থে অনেক কথা বলা হচ্ছে না। যতটুকু প্রচার করার, তাই বলা হচ্ছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা খুব ভালোভাবে বিশ্বাস করি, সব শিক্ষক আর সব ছাত্র-ছাত্রী সন্ত্রাসে জড়িত না। কারো জন্যে অন্যের শিক্ষাজীবন নষ্ট হোক, সেটা নিশ্চয়ই আমরা চাই না।’
জঙ্গিদের বিচারে ধীরগতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ফাঁসির ২১ জেএমবি আসামির মামলা হাইকোর্টে ঝুলে আছে। তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও হচ্ছে না। বিচারগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আরো বোঝামুক্ত হবে।’
তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থান চেষ্ঠার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে। তুরস্কের জনগণ সেনা অভ্যুত্থান মোকাবেলা করে প্রমাণ করে দিয়েছে জনগণই ক্ষমতার উৎস।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন আসেম সম্মেলনে তখনই ফ্রান্সে হামলার ঘটনার খবর আসে, তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানেরও খবর আসে। আমি তখনও নিন্দা জানিয়েছি, এখনও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সব সময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে।’
Leave a Reply