গুণী অভিনেত্রী অঞ্জনা। ১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয় ‘দস্যু বনহুর’ ছবি দিয়ে। প্রযোজনার পাশাপাশি এ ছবিতে তার নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন সোহেল রানা। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন শামসুদ্দিন টগর। চার দশকের ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ২৭৫টি। যা তার সমসাময়িক অনেক নায়িকার পক্ষেই করা সম্ভব হয়নি। বাংলা চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমধর্মী নৃত্য দিয়ে দ্রুতই স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছিলেন অঞ্জনা। খান আতাউর রহমান, আজিজুর রহমান, দীলিপ বিশ্বাস, শামসুদ্দিন টগর, আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, নূর হোসেন বলাই, আজিজুর রহমান বুলি, মাসুদ পারভেজ, এফ আই মানিকসহ গুণী সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। নায়ক হিসেবে পেয়েছেন রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর, জসিম, ওয়াসিম, বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল, মাহমুদ কলি, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরীসহ আরও অনেক তারকাকে। এতটা পথ অতিক্রম করার পরও গত কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র নিয়ে মনে তার ক্ষোভ জন্মেছে। তবে সেটা নিজের জন্য না। এ প্রসঙ্গে অঞ্জনা মানবজমিনকে বলেন, চলচ্চিত্রে নতুন নায়িকা কেনো তৈরি হচ্ছে না। এটাই আমার আফসোস। এটাই আমার ক্ষোভ। এখন যারা নায়ক-নায়িকা হয়ে ছবিতে কাজ করছেন তারা নিজেকে দর্শকের সামনে পরিচিত করার আগেই হারিয়ে যাচ্ছেন। আগের সময়ে এটা ছিল না। একজন প্রযোজক চলচ্চিত্রে নতুন মুখ আনলে তাকে পরিচিত করে তোলার দায়িত্ব ছিল তার। পত্রিকা, পোস্টার, ম্যাগাজিন, বিজ্ঞাপনে সব জায়গাতেই ছিল সেই মুখের পদচারণা। একের পর এক ছবি উপহার দিয়ে দর্শকের কাছে এক নামে পরিচিতি না পেলে কিসের নায়ক আর কিসের বা নায়িকা। আমার অভিনীত সব ছবির মধ্যে নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে সর্বাধিক ছবির নায়িকা আমি। আমি কাউকে ছোটো করে কথা বলছি না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা তৈরি হচ্ছে না বা হবার আগে বিয়ে করে ত্যাগ করছে এই অঙ্গন। নায়িকা মাহিকে নিয়ে অঞ্জনা খুব ভরসা করেছিলেন। তার ভাষ্য মতে, মাহি দর্শকের মন জয় করতে পেরেছিল। নিজেকে গুছিয়ে নেবার আগেই বিয়ে করে ফেলল মেয়েটা। মাহি তো একজন অভিনয়শিল্পী। তার ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল। এখনই তার বিয়ে করাটা উচিত হয়নি। শিল্পী হিসেবে তার অনেক দায়িত্ব ছিল। দর্শক থেকে সরে গিয়ে জনপ্রিয়তা রক্ষা করা যায়না বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী। সবশেষ নায়িকা হিসেবে ২০০৮ সালের দিকে জি সরকারের ‘হাঙ্গামা’ এবং একটি আইটেম গানে রাজু আহম্মেদের ‘ভুল’ ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জনা। উপমহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করার পর আমেরিকায় তাকে সংবর্ধনাও দেয়া হয়। বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রে তিনি তেমন কাজ না করলেও এ মাধ্যমটি নিয়ে সবসময়ই ভাবেন। চলচ্চিত্রের খোঁজ খবর রাখেন। এই সময়ের ছবি প্রসঙ্গে অঞ্জনা মানবজমিনকে বলেন, ‘শিকারি’ এবং ‘বাদশা’ ছবি দুটি এবারের ঈদে দর্শকের মাঝে প্রাণ সঞ্চার করেছে। প্রযোজকরা ভাবেন অল্প তেলে মচমচা করা যাবে মার্কেট। আসলে তেল বেশি না হলে মচমচে করা যায় না অর্থাৎ টাকা খরচ না করলে উপযুক্ত মানের ছবি হবে না। যৌথ প্রযোজনার ছবিতে এত চকমকে প্রিন্ট কেনো দেখছি। কারণ এখানে বাজেট ভালো। জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এর কর্ণধার আব্দুল আজিজকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। দুই দেশ মিলে ভালো মানের ছবি উপহার দিচ্ছেন তারা। এবারের ঈদে অঞ্জনা টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন। পাশাপাশি দেশে ও দেশের বাইরে নিয়মিত নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। ‘মাটিরমায়া’, ‘প্রিয়বান্ধবী’, ‘অশিক্ষিত’, ‘আনার কলি’, ‘ছোট মা’, ‘মাসুম’, ‘রাজবাড়ী’, ‘জিঞ্জির’, ‘মোহনা’,‘অভিযান’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘সেতু’, ‘গাংচিল’, ‘নেপালী মেয়ে’, ‘ভাইজান’, ‘পরিনীতা’, ‘সোহাগ’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’সহ আরও অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি এখনও দর্শকের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। অঞ্জনা ১৯৮৬ সালে প্রয়াত আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিনীতা’ ছবির জন্য অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া দুবার বাচসাস পুরস্কার, নৃত্যে শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কার পান। সবশেষে অঞ্জনা বলেন, মহিলা দর্শকদের জন্য আগে ছবি হিট সুপারহিট হতো। তাই মহিলা দর্শকদের সিনেমা হলে ফেরানো খুবই প্রয়োজন। আর আমার ব্যাপারে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পে এখনও অভিনয় করা হয়নি। এখনও ইচ্ছে আছে এমন গল্পে কাজ করার। অপেক্ষায় আছি। স্বপ্নটা সত্যি করতে চাই।
Leave a Reply