নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশের অনুরোধ রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক চা দোকানদার। এতে নিজের নাতনিকে হারানো এবং ঘরছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে ওই দোকানীর।
জানা গেছে, মধ্যরাতে পুলিশের কাছে এক নারী আশ্রয় চাইলে পুলিশ ওই নারীকে রাতটুকু থাকতে দেয়ার জন্য চা দোকানদার নুরুল হক ও তার স্ত্রী নিলুফাকে অনুরোধ করে।
পরে ঘরে নিয়ে চা দোকানদার তার নাতনি বিপনতির (৯) সঙ্গে থাকতে দেয় সুরাইয়া নামের ওই নারীকে। এতেই লংকাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন ওই নারী।
ওই নারী নিজের ব্যাগ থেকে তালা বের করে ঘরের দরজায় ভেতর দিক থেকে লাগিয়ে দেন। এরপর ঘর থেকে মাছ-তরকারি কাটার বটি নিয়ে ঘুমন্ত শিশু বিপনতির গলায় ঠেকিয়ে নুরুল হক ও তার স্ত্রী নিলুফাকে বাসা থেকে চলে যেতে হুমকি দেন।
পরে স্বামী-স্ত্রীর ডাক-চিৎকারে ছুঁটে আসে আশপাশের শত শত লোক। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও এলাকাবাসী চেষ্টা চালায় শিশুটিকে ওই নারীর জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারের। সোমবার রাত ১টা থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পাগলা শাহীবাজার আমতলা এলাকায় চা দোকানদার নুরুল হকের বাড়িতে চলে এ ঘটনা।
প্রায় সাড়ে ১০ঘণ্টা পর শিশুটিকে ছেড়ে দিয়ে বটি গলায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই নারী। এরপর পুলিশ গ্যাস কাটার দিয়ে লোহার দরজা কেটে শিশুটিকে উদ্ধার করে ওই নারীকে বটিসহ আটক করেন।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ওই নারীর ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে হাতে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া শিশু বিপনতি (৯) পাগলা শাহীবাজার আমতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ও একই এলাকার রিপনের মেয়ে। সে তার নানা নুরুল হক ও নানী লুৎফা বেগমের সঙ্গে থাকে।
আটক সুরাইয়া (২৮) শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া মূলফতগঞ্জ গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং টাঙ্গাইল জেলার চরপৌলী গ্রামের জয়নাল আবেদীন রাজার স্ত্রী। সুরাইয়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাং রোড এলাকায় মদিনা চক্ষু হাসপাতালে চাকুরি করতেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
ফতুল্লা মডেল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা-২ যুগান্তরকে জানান, সোমবার রাত ১২টায় পাগলা শাহীবাজার আমতলা এলাকায় টহল ডিউটি করার সময় নুরুল হকের চায়ের দোকানের সামনে লোকজন দেখে এগিয়ে যাই।
তিনি বলেন, ‘এসময় এক নারী নিজেকে সুরাইয়া পরিচয় দিয়ে আমাকে বলেন- সে টাঙ্গাইল থেকে তার চাচা-চাচীর খোঁজে এখানে এসেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে চাচার ঠিকানা পায়নি।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সুরাইয়া তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে অনুরোধ করে বলেন- সে সকালে টাঙ্গাইল চলে যাবে। এতে তিনি রাতটা রাখার জন্য চা দোকানদার নুরুল হক ও তার স্ত্রী নিলুফার কাছে সুরাইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান।’
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ‘ধারণা করা হচ্ছে- আটক সুরাইয়া মানুষিক ভারসাম্যহীন। তার আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা চলছে।’
Leave a Reply