রাজধানীর ধানমণ্ডিতে এক গাড়ি চালককে রাস্তায় ফেলে মারধর ও থানায় আটকে রেখে ১০ হাজার টাকা নেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট মেহেদী ইউসুফকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি।
ডিএমপিট্রাফিক বিভাগের ডিসি (দক্ষিণ) খান মোহাম্মদ রেজোয়ান জানিয়েছেন, ট্রাফিক সার্জেন্টকে ক্লোজড করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন এডিসিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সার্জেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত শনিবার ধানমন্ডি ৭/এ সড়কে ধানমন্ডিতে কেএফসির সামনে একজন গাড়ি চালককে নির্মমভাবে মারধর করেন সার্জেন্ট মেহেদী। পরে চালককে থানায় নিয়ে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
কিন্তু কে বা কারা চালককে মারধরের ঘটনার দৃশ্য রেকর্ড করে ভিডিও শেয়ারের সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে ছেড়ে দেন। এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। এক পর্যায়ে চালককে মারধরের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয় ডিএমপি।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সার্জেন্ট মেহেদী মারধরের এক পর্যায়ে চালককে মাটিতে ফেলে বুট দিয়ে লাথি মারছেন। এ সময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই সার্জেন্টকে ঘিরে ধরেন।
ঘটনার ব্যাপারে চালক ইউসুফ বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর তিনি মালিকের ছেলেকে ধানমণ্ডির ৭/এ সড়কের কেএফসি রেস্টুরেন্টে নামিয়ে দেন। এরপর গাড়িটি রাস্তার পাশে পার্কিং করেন। ওই সময় সার্জেন্ট মেহেদী তাকে গালাগাল করে কাগজপত্র দেখতে চান। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন সার্জেন্ট। পরে পথচারীরা এগিয়ে গেলে তিনি রক্ষা পেলেও তাকে টেনেহিঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে তার মালিক ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। এ জন্য চালকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন সার্জেন্ট।
ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম ঘটনা সম্পর্কে জানান, তার চালককে মারধরের ঘটনায় তিনি সার্জেন্টের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন।
এদিকে সার্জেন্ট মেহেদী বলেন, রাস্তা দখল করে পার্কিংয়ের জন্য তিনি চালকের কাছ থেকে কাগজপত্র জব্দ করতে চেয়েছিলেন। ওই সময় চালক তাকে তার মালিকের হুমকি দিয়ে বলে, ‘আপনার মতো পুলিশ আমার বস পকেটে রাখে।’ এ কথার পর তিনি ব্যবস্থা নিতে গেলে চালক তার শোল্ডার ব্যাজ ধরে টান দেন। তিনি ঘুরে চালককে একটি থাপ্পড় দেন।
মারধরের ভিডিও সম্পর্কে মেহেদী বলেন, ফেসবুকের ফুটেজে আংশিক ঘটনা এসেছে। যেভাবে ভিডিওটি এসেছে তা আংশিক। তাকে রাস্তায় ফেলে মারা হয়নি। ঘটনার সময় কয়েকজন উল্টো তার ওপর হামলা করেন।
চালককে মাটিতে ফেলে দেয়ার বলেন, ওই চালককে গাড়ির কাগজপত্র চাইলে প্রথমে সে না দিয়ে চলে যেতে চায়। পরে কাগজ দিলেও পুলিশ সম্পর্কে বাজে কথা বলে। তাছাড়া কাগজপত্র নিয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলে সে টেনে ধরে। এরপরেই তাকে ধরে থাপ্পড় দিই। এ সময় সে আমাকে ঘুষি দেয়।
সার্জেটন্ট মেহেদী ২০১৫ সালে নিয়োগ পান। এখনও তিনি শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চালককে মারধরের পর শুরুতে দায় এড়িয়ে যেতে পারলেও সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় রোববার তাকে ক্লোজ করা হয়।
Leave a Reply