সিলেটের গোলাপগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে লাশ গুম করার দায়েরকৃত মামলায় এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের কারাদন্ড এবং নিহত শিশুর মাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক জয়নাল আবেদীন এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- সাইফুল আলম ওরফে বেলাল (৩২)। সে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার বাদেপাশা গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে। খালাস প্রাপ্ত একই এলাকার আছাব আলী ওরফে ইছাহাকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৩৮)। রায় ঘোষনার সময় সাজাপ্রাপ্ত ও খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জ থানার বাদেপাশা গ্রামের মৃত সাজেদ আলীর” ছেলে আছাব আলী ওরফে ইছাহাকের স্ত্রী রাবেয়া বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে অবৈধভাবে মেলামেশা করে আসছিল একই এলাকার সাইফুল আলম ওরফে বেলাল।
তাদের এমন অবৈধ মেলামেশা রাবেয়া বেগমের মেয়ে সায়মা (৬) বিষয়টি দেখে তার পিতা আছাব আলী ওরফে ইছাহাককে জানায়। পরে আছাব আলী সাইফুল আলমকে তার বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন।
এর জের ধরে ২০০৬ সালের ৫ মে বিকেল ৫ টার দিকে সাইফুল আলম বাদেপাশা রাস্তায় সায়মা খেলাধূলা করার সময় তাকে স্থানীয় হাফিজিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসার পিছনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে স্থানীয় আজির উদ্দিনের বাড়ির পায়খানার টেংকীর মধ্যে সায়মার লাশ গুম করে রেখে দেয়।
এদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় সায়মাকে খোঁজাখুজি করে তার পরিবার কোথাও পায়নি। পরে জানতে পারে “সাইফুল তাকে খেলা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল।
এক পর্যায় স্থানীয় কয়েকজন মেম্বার সাইফুল আলমকে ডেকে এনে বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন সে সায়মাকে হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি স্বীকার করে। খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয় আজির উদ্দিনের বাড়ির পায়খানার টেংকীর মধ্যে সায়মার লাশ উদ্ধার করে এবং সাইফুল আলম ওরফে বেলালকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় আছাব আলী ওরফে ইছাহাক বাদী হয়ে ঘাতক সাইফুল আলম ওরফে বেলাল ও রাবেয়া বেগমকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ৪ (৬-০৫-২০০৬)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ২৭ জুলাই গোলাপগঞ্জ থানার এসআই মামুন অর রশিদ সাইফুল ও রাবেয়া বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০০৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে আদালত মামলাটির বিচারকায্য শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানী ও ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী সাইফুল আলম ওরফে বেলালকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও আসামী রাবেয়া বেগমকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট বেলাল উদ্দিন ও আসামীপক্ষে এডভোকেট মোচ্ছাঃ আছমা বেগম ও এডভোকেট আয়শা বেগম মামলাটি পরিচালনা করেন।
Leave a Reply