দেশব্যাপি বহুল আলোচিত সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার রায়ে একমাত্র আসামী শাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল ইসলামের যাব্বজীবন দন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বদরুলের ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ২ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। এর আগে বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেটের মূখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালত থেকে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। তাছাড়াও এ মামলায় ৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বদরুল। ৮ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুনুর রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ নভেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৯ নভেম্বর আদালত বদরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন খাদিজা। এর মাধ্যম্যে মামলার ৩৬ সাক্ষীর ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয় এবং আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৮ মার্চ বুধবার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ।
এদিকে, এই রায় সম্পূর্ণ বাংলায় লেখা হবে। রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের পর গত রোববার দুপুরে এমনটি জানিয়েছিলেন সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
উল্লে¬খ্য, গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। খাদিজাকে কোপানোর দায়ে ঘটনাস্থল থেকে জনতা ও এমসি কলেজ শিক্ষার্থীরা শাহজালাল বিশ্ববদ্যিালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। বদরুলের চাপাতির আঘাতে খাদিজার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হামলার পর প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় খাদিজাকে। সেখানে ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় খাদিজাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২৪ ফেব্রæয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজ ছাত্রী খাদিজা।
অপরদিকে , ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে দন্ডবিধির ৩০৭, ৩২৪ ও ৩২৬ ধারায় শাহপরান থানায় বদরুলকে একমাত্র আসামী করে মামলা করেন। ওই দিনই বদরুলকে বহিস্কার করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বদরুলের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে ও খাদিজা সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে।
এ ব্যাপারে সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি ) এ্যাডভোকেট মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ জানান, আলোচিত এ মামলায় বদরুলের যাব্বজীবন দন্ড দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে সু বিচার পেয়েছেন খাদিজা।
Leave a Reply