‘আমার নাতনী আর দাদা বলে ডাকবে না। কলেজে যাওয়ার সময় আর বলবে না ‘দাদা আমার জন্য দোয়া কর’। বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন লিজার দাদা। লিজার দাফনের সময় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে দক্ষিণ সুরমার বদিকোনাস্থ তার গ্রামের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এলাকার শাহজামাল বাদশার কন্যা লিজা বেগম (২০)। ব্রেস্ট টিউমারে আক্রান্ত লিজা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ডায়াবেটিক হাসপাতালের ৫১৭ নম্বর কেবিনে ভর্তি হন। টিউমার অপারেশনের প্রস্তুতির জন্য বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বিকেল পাঁচটার দিকে তাকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লিজা এ বছর দক্ষিণ সুরমা কলেজের বিএ পাস কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। শুক্রবার বাদ জুমআ দক্ষিণ সুরমার প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লিজার জানাযা ও পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়। লিজার দাদা শাহ আলম বলেন, সে অত্যন্ত শান্তি প্রকৃতির একটা মেয়ে ছিল। বোরকা পড়ে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসার সময় আমার সাথে কথা বলে যেত। আর বলত দাদা আমার জন্য দোয়া কর। তার মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকদের অবহেলা দায়ী করে তিনি বলেন, ডায়াবেটিক হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়া কথা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য। তাহলে ডাক্তার কেন আমার নাতনীকে ঐ হাসপাতালে অপারেশনের জন্য ভর্তি করল? যারা তাকে চিকিৎসায় অবহেলা করে পৃথিবী থেকে বিদায় দিয়েছে আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। প্রাণপ্রিয় মাকেও মা ‘কলেজ থেকে এসে ভাত খাব’ আর বলা হবে না লিজার, এমন কথা জানালেন লিজার মা রেজিয়া বেগম। লিজার লাশ বাড়ীতে পৌছালে চিৎকার করে কেঁদে বলেন, আমার জাদু ময়না লিজাকে তোমরা এনে দাও…। তখন বার বার লিজা লিজা বলে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বাকরুদ্ধ বাবা শাহজামাল’র অবস্থা একই। ভাই বোন একে অন্যকে জড়িয়ে কাঁদছিল। শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা ছিল না কারো। হৃদয় বিদারক দৃশ্য পুরো এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। লিজা ছাড়া তার আরো ১ ভাই বোন রয়েছে। লিজা ছিল সবার ছোট। বাবা ব্যবসায়ী। শুক্রবার জুম্মার পর বাড়ির পাশে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সহ অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply