প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণহত্যা দিবস পালন না করায় বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এবং যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদারদেরই আপন মনে করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি-জামায়াত) এই পালন না করার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট যে, তারা একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। অন্যদিকে যারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মেয়েদের ইজ্জত লুন্ঠনকারী এখনো তাদেরই আপন মনে করে। ’
তিনি বলেন, সমগ্র বাংলার জনগণ ও সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ তাদের পছন্দ নয়। বিএনপি-জামায়াত বুঝিয়ে দিলো যে, তারা বাংলার জনগণের সাথে নেই। বরং তারা আছে আল-বদর, রাজাকার, আল-শামস ও পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই যদি না হতো তাহলে তারা ২৫ মার্চ যে গণহত্যা শুরু হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘদিন এ দেশে যেভাবে গণহত্যা চলে, তাতে বাংলার নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকতো। মুক্তিযুদ্ধে যারা শাহাদৎবরণ করেছে তাদের পাশে থাকেতো। স্বজনহারাদের পাশে থাকতো। কিন্তু তারা তাদের পাশে নেই। কাজেই এদের চরিত্র এখন স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এবারেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা দিয়ে সরকারীভাবে পালন করেছি। মন্ত্রিসভায় এবং সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটি বিল আকারে পাস হয়েছে এবং এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য যে, সকলেই গণহত্যা দিবস পালন করবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম। আমরা দেখলাম একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করলো না। কেন পালন করলো না, ইতোমধ্যে আমাদের বক্তারা বলেছেন। তাদের এই পালন না করার মধদিয়ে এটা স্পষ্ট যে, তারা একদিকে যেমন বাংলাদেরশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলো। আর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা এমনকি জাতির পিতার খুনীদের খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত বসিয়েছিল।
তিনি বলেন, যারা খুনীদের ও যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করে, মদদ দেয়, গণহত্যা দিবস পালন করে নাÑ তারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এ দেশের মানুষের কল্যাণও তারা চায় না। এটা তাদের চরিত্র এবং এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বক্তৃতা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজুলল করিম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান, নারী নেত্রী সিম্মি আহমেদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ।
সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
আলোচনার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, শহীদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদসহ সকল গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা, ১৪-দলীয় নেতা এবং সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশের জনগণ যখন আমাদের ক্ষমতায় আনে তখন জাতীয় গণমাধ্য্যমের ‘লুকআপে’ রেডিও-টিভিতে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর সুযোগ হয়। একটা প্রজন্ম যারা এই ভাষণ শুনতে পারেনি তারা এটি শুনতে পাওয়ায় এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস তাদের কাছে স্পষ্ট হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যুগ মিডিয়ার যুগ। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বেরই সত্য কথা জানা যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যে সকর সংস্থা বা মিডিয়া রয়েছে সেখানে যদি ব্রাউজ করে তাহলে দেখবেন ১৯৭১ সালে সেই জাতির পিতার স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু আজকে স্পষ্ট। সেসব মিডিয়ার আর্কাইভে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। সে সুযোগ এখন আছে। আমাদের পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া এখনও অনেক স্মৃতিকথা লিখে যাচ্ছে বা সেদিনের ঘটনা প্রচার করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর পরই জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হয়। আমরা দীর্ঘদিন পরে হলেও সেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ, গণহত্যা বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আর যেসব দেশ তাদের গণহত্যা দিবস পালন করতে চায় সেই সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে জাতিসংঘের ওই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিএনপি’র বিতর্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা সম্পর্কে বলেন,
জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো জাতির পিতার ২৩ বছরের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে।
তিনি বলেন, দীর্ষ ২১ বছর ধরে মিথ্যা বয়ান দিয়ে গেছে তারা। কাজেই আমি আজকে এই অনুরোধ করবো যে, এই ঘোষণা কে করলো- না করলো এ নিয়ে আর আলোচনার দরকারই নেই। এই কারণে যে, আজ মানুষের কাছে সত্যটা স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারচেয়েও বড় কথা আপনারা জানেন যে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক তার সমাধান আমাদের উচ্চ আদালতই করে দিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই দিয়েছেন তা ওই উচ্চ আদালতের রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
Leave a Reply