প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান দখলে করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় রাগীব আলীসহ পাঁচ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে রাগীব আলীর ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় ঘোষণা করেন বলে জানান সিলেটের পিপি মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। আসামীদের চারটি ধারায় এ দণ্ড প্রদান করা হয় বলে জানান এ সরকারি কৌঁসুলি।
দণ্ডিত রাগীব আলী ছাড়া অন্য চার জন হলেন রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদির এবং তার নিকটাত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ। তাদের মধ্যে কাদির ও রুজিনা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর থেকে পলাতক।
এ ছাড়া মামলার আরেক আসামি তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
রায়ে রাগীব আলীকে ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর করে ও ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দণ্ডিত অন্য চার জনের প্রত্যেককে ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারায় সাত বছর ও ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডিত পাঁচ জনকেই প্রতিটি ধারায় ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকল পক্ষের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। কিন্তু মামলায় অভিযুক্ত রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণ দেখানোয় রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায়। ৩০ মার্চের মধ্যে আব্দুল হাইয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসককে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে প্রতিবেদন না দেওয়ায় ফের ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। সে প্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল আদালতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাতে স্বাস্থ্যগত মানসিক সমস্যা ধরা পড়েনি।
প্রতিবেদন দাখিলের পর পরই উচ্চ আদালতের নির্দেশে আদালত স্থগিত করা রায় ঘোষণার নতুন দিন ৬ এপ্রিল ধার্য করা হয়।
এর আগে, গত ২ ফেব্রুয়ারি তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলার রায় দেন একই আদালত। রায়ে রাগিব আলী ও তার ছেলেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর পর পলাতক থাকাবস্থায় পত্রিকা প্রকাশের কারণে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য একটি মামলার রায়ে রাগীব আলী ও তার ছেলেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত। বর্তমানে এসব মামলায় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই।
দেবোত্তর সম্পত্তির চা বাগান বন্দোবস্ত নেওয়া ও চায়ের ভূমিতে বিধি বহির্ভূত স্থাপনা করার অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দু’টি করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করে দেয় পুলিশ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের দু’টি মামলা গত বছরের ১৯ জানুয়ারি পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্ট।
গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ১২ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এদিনই রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান। ১২ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে জকিগঞ্জ সীমান্তে আবদুল হাই ও ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে আলোচিত এ মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রাগীব আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তারই মালিকানাধীন মালনিছড়া চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার মাহমুদ হোসেন চৌধুরী ও আব্দুল মুনিম।
Leave a Reply