তারকাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। এক তারকার চোখে আরেক তারকা কেমন? জনপ্রিয় তারকা বিশ্লেষণ করবেন আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব- এই নিয়ে নন্দনের নতুন বিভাগ ‘তারার চোখে তারা’। চিত্রনায়িকা পপি কথা বলেছেন শাবনূরকে নিয়ে…
২৫ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার! এটা ভাবলে তো যে কেউ বিষ্মিত হবেন। আমিও বিষ্মিত হই। কিন্তু শাবনূরের মতো গুণী শিল্পীর জন্য এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়াটা স্বাভাবিক বলেই মনে করি। তাই প্রশ্নটা আপনাদেরই করতে চাই, বলুন তো, শাবনূরের মতো সফল অভিনেত্রী দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে ক’জন আছেন? কয়েকটি নাম অবশ্যই খুঁজে পাবেন, তারপরও আপনাদের মানতেই হবে, শাবনূর সেই সফল অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম। নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। সেই ভক্তদের মধ্যে আমিও একজন। এখনও যদি তার কোনো ছবি দেখি, আগের মতোই সমান মুগ্ধ হই। নিজেকেই প্রশ্ন করি. শাবনূর এমন নিখুঁত করে চরিত্র ফুঁটিয়ে তোলেন কীভাবে? উত্তরটা নিজেই দিই, অভিনয় তার ধ্যান-জ্ঞান বলেই এত চমৎকার ভাবে চরিত্র উপস্থাপন করতে পারেন। আমি নিজে অভিনেত্রী বলেই জানি, নানা ধরনের চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া সহজ কাজ নয়। অথচ এই কঠিন কাজটি শাবনূর সহজাতভাবেই করতে পেরেছেন। একটি দুটি নয় শতাধিক ছবিতে। শাবনূরের অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে তা মহাকাব্য হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং সেইসব কথা বলি, যা অনেকে জানেন না।
শাবনূরের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমি তার ভক্ত। মনে আছে তার ‘বিক্ষোভ’ ছবিটি দেখতে আব্বুর বকা খাওয়ার কথা। তখন আমি স্কুলের ছাত্রী। সামনে ছিল ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ক্লাসের বান্ধবীরা সিনেমা দেখার পরিকল্পনা করেছিলাম। সেই পরিকল্পনা মাফিক গিয়েছিলাম সন্ধ্যার শোতে ‘বিক্ষোভ’ ছবিটি দেখতে। ছবি শেষ হতে রাত হয়ে গিয়েছিল। বাসায় ফিরে জানতে পারি, আব্বু খুব রেগে আছেন- কেন এত রাত পর্যন্ত আমি বাড়ির বাইরে। এ নিয়ে সেদিন আব্বু আমাকে অনেক বকাঝকা করেছিলেন। সেদিন বকা খেয়ে নীরব ছিলাম। কারণ আব্বুকে বোঝানো সম্ভব ছিলনা, সালমান-শাবনূর জুটির সিনেমার কী আকর্ষণ!
বয়স আর ক্যারিয়ার দু’দিক থেকেই শাবনূর আমার অনেক সিনিয়র। কিন্তু মজার বিষয় হলো তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আমরা একে অন্যকে দোস্ত বলে ডাকতাম। দেখা হলে দোস্ত বলে একজন অন্যজনার গলা জড়িয়ে ধরতাম। আমাদের মধ্যে অনেক মজা হতো। কিন্তু অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা আছে। আমরা নাকি একে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। আমাদের সম্পর্কও খুব একটা ভালো না। মানুষের এ ধারণা একেবারে ভুল। কারণ আমাদের মধ্যে এত ভালো সম্পর্ক যে, একজন অন্যজনকে যে কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতাম। শাবনূরের জন্মদিনে আমি এবং আমার জন্মদিনে শাবনূর, ফোন করে শুভেচ্ছা জানানো হতো। শুধু তাই নয়, আমরা একে অন্যের বাসায়ও চলে যেতাম। তা ছাড়া আমাদের গ্রামের বাড়িও খুব কাছাকাছি। আমি খুলনার মেয়ে আর শাবনূর যশোরের। আরও একটি বিষয়, অনেকে মনে করতেন আমরা দুই বোন। আমাদের চেহারাও অনেক মিল। এমনকি ঘরের লোকজনও এ কথায় রায় দিতেন। দুঃখ কেবল একটাই, দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আজও শাবনূরের সঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করা হলো না।
Leave a Reply