বালাম বই থাকার কথা সংরক্ষিত রেকর্ড রুমে। কিন্তু আগুনে পুড়ে যাওয়া স্ট্যাম্প ভাণ্ডারের দোকানে পাওয়া গেল বালাম বই। আর এ ঘটনা নিয়ে সিলেটের সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তোলপাড় চলছে। সকালে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিকী পুড়ে যাওয়া বালাম বই উদ্ধার করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- বালাম বই থাকার কথা রেকর্ডরুমে। কিন্ত কী করে সেটি বাইরে এলো এ নিয়ে সব মহলেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ আছে- সিলেটের একটি ভূমিখেকো সিন্ডিকেটের হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় সময় বালাম বইয়ের পাতা নষ্ট করে ফেলে। আর গতকাল বাইরের স্ট্যাম্প ভাণ্ডারের দোকানে সেটি পুড়ে যাওয়ার পরই পাওয়া গেল। সিলেটের রেকর্ডরুমের পাশেই হচ্ছে নাজির স্ট্যাম্প ভাণ্ডার। এই দোকানের মালিক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কপিস্ট বেলায়েত আহমদ মুরাদ। তবে মুরাদ দোকানে বসেন না। ম্যানেজার নিজাম আহমদ মান্না এ দোকান পরিচালনা করেন। গতকাল দুপুরে নাজির স্ট্যাম্প ভাণ্ডার’র ম্যানেজার নিজাম আহমদ মান্না জানান, প্রতিদিনের মতোই তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে স্ট্যাম্প ভাণ্ডার দোকানটি বন্ধ করে চলে যান। রাত ১২টার দিকে প্রহরী মাখন মিয়া ফোন করে নিজামকে জানান তাদের টং দোকানের ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তৎক্ষণাৎ নিজাম দোকানে গিয়ে দেখেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এদিকে গতকাল সকালে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে দেখেন পুড়ে যাওয়া দোকানের ভেতরে একটি বালাম বই রয়েছে। এই বালাম বইটি হচ্ছে ২০০২ সালের। বই নং-১৯৩। এ ছাড়া আগুনে স্ট্যাম্প ভাণ্ডারের ফটো মেশিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। কিন্তু বালাম বই পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় দেখা দেয়। কারণ- বালাম বই কেবল থাকে সংরক্ষিত রেকর্ড রুমে। প্রতিটি বালাম বইয়ে শতাধিক দলিলের মূল কপি থাকে। নকল সংগ্রহকালে বালাম বই বের করে কপিস্টদের দেয়া হয়। সেটি রেকর্ড রুমের বাইরে যাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু সেই বালাম বইটি কীভাবে বাইরে এলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুড়ে যাওয়া বালামের একশটি দলিলে কত টাকার সম্পত্তির রেকর্ড আছে সেটি কেউ বলতে পারেননি। তবে- যে বইটি পুড়েছে সেটি নগর এলাকার সম্পত্তির দলিল বলে কর্মকর্তারা ধারণা করেন। খবর পেয়ে সেখানে যান সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিকী। তিনি নিজেও বাইরের দোকানে বালাম বই পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় হতবাক। এ সময় তিনি বালাম বইটি জব্ধ করেন। গতকাল সাব-রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিকী জানিয়েছেন- বালাম বইটি বাইরে দোকানে আসার কোনো নিয়ম নেই। কী করে সেটি বাইরে এলো এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন- প্রতিটি বালাম বই যখন কপিস্টদের হাতে দেয়া হয় তখন তাদের নামে সেই বইটি লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। সুতরাং কোনো কপিস্টের নামে বইটি আনা হয়েছে সেটি তদন্ত করে বের করা হবে। এদিকে- ঘটনার পরপরই সিলেটের জেলা রেজিস্ট্রার আলী আহমদ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি গঠন করা হয় সিলেটের জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ ও ঢাকা দক্ষিণ সাব-রেজিস্ট্রারকে দিয়ে। গতকাল বিকাল থেকে ওই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আর এ ঘটনায় জেলা রেজিস্ট্রার তাৎক্ষণিক সাব-রেজিস্ট্রার সহ রেকর্ড রুমের কর্মকর্তাদের শোকজ করেছেন। এদিকে- এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রার আবু বক্কর সিদ্দিকী বাদী হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার আলী আহমদ। তিনি বলেন- এ ঘটনায় স্ট্যাম্প ভাণ্ডারের ম্যানেজার, মালিক, রেকর্ড কিপার, সহকারী রেকর্ড কিপারের নাম উল্লেখ করে আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করা হবে। পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনায় দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। আলী আহমদ বলেন- রেকর্ড রুমে রয়েছে সিলেটবাসীর সম্পত্তির দলিল। সুতরাং অপরাধীদের কোনো ভাবে ছাড় দেয়া হবে না। সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ডরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রীনা রানী রায় গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন-‘১৯৩ নম্বর বালাম বইটি কারো নামে এন্ট্রি হয়ে রেকর্ড রুম থেকে বের হয়নি। ইতিমধ্যে আমরা তদন্ত করে দেখেছি।’ তিনি বলেন- ‘যদিও দায়ভার আমরা এড়াতে পারি না কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সিলেটবাসীর সম্পত্তির দলিল আমানত হিসেবেই আমরা সংরক্ষণ করি।’ এদিকে- সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানিয়েছে- সাব-রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে বালাম পুড়ানোর ঘটনায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply