বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীদের প্রথম প্রেমটা ছিল ফুটবলই। মাঠের নৈপুণ্যে বিপরীত চিত্র নিয়ে পরে দর্শকের প্রেমটা গভীর হয় ক্রিকেটের সঙ্গে। তবে এবার দেখছি ফুটবলে প্রেম জেগে ওঠার আলামত- বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের ফাইনালের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বার্তা বাংলাদেশের এক ফুটবল সমর্থকের। বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শিরোপার লড়াই আজ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৫টায়। দর্শকদের ফুটবল উন্মাদনার চিত্র দেখা গেছে আসরে বাংলাদেশের প্রত্যেক ম্যাচেই। আর সেমিফাইনালে এ চিত্র হয় আরও স্পষ্ট। থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল দেখতে ওইদিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হয় প্রায় ৩০ হাজার দর্শক। আর গ্যালারি ঠাসা দর্শকের সামনে বল পায়ে অসাধারণ হয়ে ওঠে পুরো বাংলাদেশ দল। তাদের অসাধারণ নৈপুণ্যেই ২০০৫ এর পর কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। সুযোগ এসেছে আরেকটি শিরোপা জেতার। সর্বশেষ কোন আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল শিরোপার স্বাদ নেয় ২০০৩ সালে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মালদ্বীপকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হাতে তোলে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হার দেখে শঙ্কা জাগছিল বাংলাদেশ ভক্তদের। স্বাগতিক তারকাদের মলিন নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ফাইনালের স্বপ্নটা দেখাচ্ছিল বিলাসিতার মতো। তবে পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নৈপুণ্যে ফিরতে দেখা যায় বাংলাদেশ দলকে। কাঙিক্ষত জয় শেষে সেমিফাইনালের টিকিট হাতে নেয় মামুনুলরা। কিন্তু সেমিফাইনালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আসরের সবচেয়ে শক্তিধর দল থাইল্যান্ড। তবে এখানে বল পায়ে চমক ও ম্যাচ শেষে জয় নিয়ে বাংলাদেশের চোখ এখন ট্রফির দিকে।
চাই আর একটি মাত্র জয়। এতে থাকছে বাংলাদেশ তারকাদের সামনে প্রতিশোধের সুযোগও। প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে হার নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ মিশন শুরু করেন মামুনুলরা। দলটির বিপক্ষে অতীত ইতিহাসও সুখকর নয় বাংলাদেশের। মালয়েশিয়া জাতীয় দলের বিপক্ষে ১০ ম্যাচের ৭টিতে হার দেখেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। তাই বলে ফাইনালে মালয়েশিয়াকে ভয় পাচ্ছেন না হেমন্ত, সোহেল রানারা। ২০১২ সালে মালয়েশিয়া জাতীয় দলকে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মাত্র ১১ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটির বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ডও রয়েছে মামুনুলদের। বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘ফাইনালে আমরা শহীদদের জন্য খেলবো। তাদের জন্য আমরা দেশ পেয়েছি। সবার সেরাটা দিয়ে তাদের জন্য আমরা শিরোপা জিততে চাই।’ মামুনুল বলেন, ‘আসলে সেরা খেলোয়াড় হতে চায় সবাই। এজন্য ফাইনালে নিজেদের শতভাগেরও বেশি দিতে চাইবো আমরা। ম্যাচটাকে প্রতিশোধ হিসেবে দেখছি না। ১৫ বছর পর এ টুর্নামেন্ট হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে হেরেছিলাম। আমি বলবো, শেষ ভাল যার সব ভাল তার। আমরা শেষ ভালর অপেক্ষায় রয়েছি।’ তবে বাংলাদেশের কৌশলী কোচ লোডভিক ডি. ক্রুইফ এ ম্যাচের প্রতিপক্ষকে ফেভারিট আখ্যা দিয়ে শিষ্যদের চাপমুক্ত রাখতে চাইছেন। ‘অনেক কারণে ফাইনাল ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ম্যাচে বাংলাদেশ দল ছিল সুগঠিত। বিশেষ করে প্রথমার্ধে অনেক ভাল খেলেছে। আশা করছি ফাইনালেও বাংলাদেশ ভাল খেলবে। তবে আমি মনে করি, ফাইনালে ওরাই ফেভারিট। থাইল্যান্ডের মতো মালয়েশিয়াও ছোট ছোট পাসে খেলে। তবে আমরা এনিয়ে কাজ করছি। একদিন বিরতিতেই আমাদের মাঠে নামতে হবে। একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে বলবো শারীরিক ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন। এজন্য আমরা সাঁতার কাটা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এদিকে উদ্বোধনী ম্যাচের বাংলাদেশের সঙ্গে এই বাংলাদেশকে মেলাতে পারছেন না মালয়েশিয়ার কোচ রাজীব ইসমাইল। থাইল্যান্ডকে শক্তিধর ভেবে ফাইনালে বাংলাদেশকেই চাইছিলেন এ কোচ। তবে গতকাল তিনি বাংলাদেশ ম্যাচ বাই ম্যাচ যেভাবে উন্নতি করছে তা দেখার মতো। আশা করছি ‘জমজমাট ফাইনাল হবে।’ নিজের ঢাকার মাঠে খেলার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রাজীব ইসমাইল বলেন, আমি দুইবার খেলোয়াড় হিসেবে এসেছি। এবার কোচ হিসেবে এখানে এলাম। আমি কাপ নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ দল সম্পর্কে এ কোচের মূল্যায়ন হলো- ‘প্রতিটি ম্যাচেই বাংলাদেশ ভাল খেলেছে। ম্যাচে গতি পরিবর্তন করার যোগ্যতা রয়েছে। অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া জাহিদ হোসেন ও জাহিদ হাসান এমিলির দিকে আমার আলাদা নজর থাকবে।
Leave a Reply