চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল, মুকুটহীন সম্রাট নায়করাজ রাজ্জাক।
বুধবার সকাল সোয়া ১০টা ২০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
রাজ্জাককে যখন কবরে শোয়ানো হয় তখন তিন ছেলে বাপ্পারাজ, বাপ্পি ও সম্রাট, আত্মীয়-বন্ধু আর চলচ্চিত্র অঙ্গনের কলা-কুশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজ্জাক।
সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের বাসভবন ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’-তে।
মরদেহ সেখানে পৌঁছতেই স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশ। সেখান থেকে বেলা ১১টায় মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে।
শেষবারের মতো নায়করাজের এফডিসিতে আগমনে শোকার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আগত শিল্পী-কলা-কুশলীরা ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে ওঠেন।
এফডিসিতে লাশবাহী গাড়ি খোলা রেখেই শেষবারের মতো সবাই দেখেন নায়করাজকে। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ। তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থিরচিত্রগ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ব্যক্তিগতভাবে রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, শাবনূর, চিত্রনায়ক শাকিব খান, ফেরদৌস, আমিন খান, রুবেল, আহমেদ শরীফ, ওমর সানি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ। শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
“লাশ কবরে নামানো হচ্ছে (ছবি: এসএম গোর্কি)”
“লাশ কবরে নামানো হচ্ছে (ছবি: এসএম গোর্কি)”লাশ কবরে নামানো হচ্ছে (ছবি: এসএম গোর্কি)এফডিসি থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় রাজ্জাকের মরদেহ। তার অনেক আগেই সেখানে আসতে শুরু করেন রাজ্জাকের ভক্ত-অনুরাগীরা। হাজার হাজার মানুষ ফুল হাতে অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের প্রিয় অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে গুলশানের আজাদ মসজিদে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে আবারও তার লাশ রাখা হয় হাসপাতালের হিমঘরে। তার মেজ ছেলে বাপ্পির জন্য অপেক্ষা করা হয়।
বুধবার তার ছেলে কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে রাজ্জাকের দাফন সম্পন্ন হয়।
নায়ক আবদুর রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ওখানেই তার বেড়ে ওঠা। স্কুল জীবনে থাকা অবস্থায় তার অভিনয়ের হাতেখড়ি। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা স্কুলের মঞ্চনাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা। পাকিস্তানেও তিনি অভিনয় নিয়ে কাজ করেছেন। এরপর ১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে সদর্পে উপস্থিত হন দর্শকনন্দিত এই নায়ক। কয়েক দশকের অভিনয় জীবনে তিনি জীবন থেকে নেয়া, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিলসহ প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
Leave a Reply