আজিজুর রহমান খোকন:বিভাগীয় শহর সিলেট নগরীর টাউনবাস সার্ভিসের যাত্রী সেবারমান নেই বললেই চলে। সিলেট শহরতলী এলাকার বিভিন্ন রোডে চলাচলকারী টাউন বাস সার্ভিস এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে মাত্র দুটি রোডে গুটি কয়েক বাস নিয়ে টিকে আছে টাউন বাস সার্ভিস। যাত্রীসেবার মানও সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। লক্কড় ঝক্কর বাস, ভাঙ্গা সীট, ফ্যান ও সীট কভার নেই, প্রায় সময় রাস্তায় বাস বিকল হয়ে পড়াসহ নানা ভোগান্তি এই দুই রুটের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহানোর পাশপাশি অনেক সময় পায়ে হেঁটে বাড়ী ফিরতে হচ্ছে।
জানা যায়, টাউন বাস সার্ভিস চালু হওয়ার করতো। ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ নতুন আঙ্গিকে ২৩ সিটের ৩০টি বাস মোগলাবাজার-হেতিমগঞ্জ, লালাবাজার-টুকেরবাজার, বটেশ^র, জালালপুর রোডে চালু হয়। মাত্র কিছুদিন চলাচলের পর বাসগুলোর অবস্থা লক্কড় ঝক্কড় হয়ে পড়ে। বাসগুলোতে ফ্যানের কোন অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে বাসের সিটগুলো নড়বড়ে, অনেক বাসে ছেঁড়া সিট, জানালা ভাঙ্গা, কোন কোন বাসে পুরান কাপড়ের কাঁথা দিয়ে সিটগুলো ঢেকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিছু কিছু বাসে সিট কভার থাকলেও সেগুলো এতোই দুর্গন্ধ যুক্ত যে, যাত্রীদের বসার উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, টাউন বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর সিলেট নগরী ও শহরতলীর নিম্ন আয়ের লোকজন বেশি সুফল পায়। কম টাকায় তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারতেন। কিন্তু উন্নত সার্ভিস ও বিভিন্ন রোডে চলাচল না করায় এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। টাউনবাস সার্ভিস চালু হওয়ার পর সরকারী, বেসরকারী চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা টাউনবাসে চলাচল করতেন। কিন্তু টাউন বাসগুলোর যাত্রী সেবার মান দিন দিন কমতে থাকে। টাউন বাসে ভাড়া কম থাকায় যাত্রীদের চলাচলে আগ্রহ থাকলেও লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থা হওয়ায় যাত্রী সাধারণ সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে, ৩০টি বাস নিয়ে টাউন বাস সার্ভিস চালু হলেও বর্তমানে মাত্র ৮টি বাস শুধু দু’টি রোডে চলাচল করছে। এর মধ্যে ৫/৬টি বাস প্রায়ই বিকল হয়ে ওয়ার্কশপে থাকে। বাস স্বল্পতার কারণে বটেশ্বর রোড, টুকের বাজার রোড, লালাবাজার, জালালপুর রোডে টাউনবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৪টি রোডে টাউনবাস চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ায় সিলেট শহর ও শহরতলীর বিশাল জনগোষ্ঠীর যাতায়াতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক লুনের মাধ্যমে টাটা কোম্পানীর প্রতিটি বাস ১৮ লাখ টাকা দাম ধরে ৩০টি বাস নিয়ে টাউনবাস সার্ভিস চালু করা হয়। মালিক পক্ষ প্রতি মাসে ২৮ হাজার টাকা করে ব্যাংক কিস্তি জমা দিতেন। এভাবে কিছু দিন চলতে থাকায় বাসগুলো বিকল হতে থাকে। মালিক পক্ষ বাধ্য হয়ে ১৭টি বাস বিক্রি করে দেন। ফলে ৩০টি বাসের মধ্যে মাত্র ৮টি বাস নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে মাত্র দু’টি রোড মোগলাবাজার ও হেতিমগঞ্জ রোডে চলাচল করছে। অন্যান্য রোডের যাত্রীরা টাউন বাস না থাকায় অধিক পয়সা দিয়ে বিকল্প পন্থায় যাতায়াত করছেন। স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন রোডে যাত্রীদের টাউনবাসের চাহিদা থাকলেও উন্নতমানের টাউনবাস সার্ভিস চালু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসগুলো পরিবর্তন করে নতুন কয়েকটি বাস শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন রোডে চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দাবী জানান তারা।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত টাউনবাস শাখার সভাপতি নছির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান টাটা কোম্পানী উন্নতমানে বাসগুলো সরবরাহ না করায় মালিক পক্ষ তেমন একটা লাভবান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেক মালিক বেশ কয়েকটি বাস বিক্রি করে দিয়েছেন। মাত্র দু’টি রোডে ৮টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে ৪/৫টি প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে থাকে।
বিভাগীয় শহরে টাউনবাস সার্ভিসের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্বেও অধিকাংশ রোডে টাউনবাস না চলায় নিম্নআয়ের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বিলাসবহুল টাউনবাস সার্ভিস থাকলেও সিলেটে এর অস্তিত্ব নেই। সকল রোডে উন্নতমানের টাউনবাস সার্ভিস চালুর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগি মহল।
Leave a Reply