এবার বিয়ে ও ডিভোর্সের কথা স্বীকার করেছেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জান্নাতুল নাঈম। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিয়ে ও ডিভোর্সের তথ্য গোপন করে সমালোচনার মুখে পড়ে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট হারাতে যাচ্ছেন জান্নাতুল নাঈম। আয়োজক ও বিচারকদের সঙ্গে কথা বলে তেমন আভাস পাওয়া গেছে।
ফেসবুক লাইভে নিজের ভুল স্বীকার করে জান্নাতুল নাঈম বলেছেন, ‘ডিভোর্সি হওয়া সত্ত্বেও মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি, এটা আমার ভুল। আপনারা যদি আমাকে এ জন্য শাস্তি দিতে চান, আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু বাংলাদেশে আইন আছে, এখানে ১৬ বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে দিলে সেটা বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হয়। আমার বেলায়ও তা হয়েছে। যে একটা দিনও সংসার করেনি, তাকে কেন সারা জীবন বিবাহিতা পরিচয় বয়ে যেতে হবে, কেন?’
জান্নাতুল নাঈম আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে কোনো বাধাবিপত্তির কাছে মাথানত করিনি। আমি কখনো হার মানতে শিখিনি। ১৬ বছরের একটি মেয়েকে তার বাবা জোর করে বিয়ে দিচ্ছে, সে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে। সেই মেয়ে এখন সফল। সে তার সমাজের কোনো কথা শোনেনি। আশপাশের কারও কথা কানে নেয়নি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ দৈনন্দিন একটি ঘটনা, তাই এ বিয়ে মানতে পারিনি। আমি এর বিরুদ্ধে কাজ করতে চেয়েছি।’
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ভুল হয়েছে স্বীকার করে জান্নাতুল নাঈম বলেন, ‘পথে পথে বাইক রাইডার হিসেবে ঘোরার সময় এত কথা হয়নি আমাকে নিয়ে। আজ কেন সবাই আমার পিছু লেগেছেন! হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমি দেখিয়েছি, মেধা দিয়ে লড়তে জানি। আমার অপরাধ, বাবার জোর করে দেওয়া বিয়ে মেনে নিয়ে সংসার করিনি। এটাই আমার বড় ভুল!’
যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদেরকে জান্নাতুল নাঈম বলেন, ‘একবার ভেবেছেন, চারপাশের প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে কতটা সংগ্রাম করে আমাকে আজ এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। তিলে তিলে নিজেকে তৈরি করেছি। না পেয়েছি বাবা কিংবা পরিবারের সমর্থন। আপনারা আমাকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন? ১৬ বছরের মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিলে, সেটা শাস্তি হিসেবে গণ্য হয় না। বাল্যবিবাহ নিয়ে হাসাহাসি হয় না। আর একটি ডিভোর্সি মেয়ে ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করে এসে যখন সফল হয়, তার শাস্তি নিয়ে কথা বলা হয়। তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা হয়। কেন?’
নিয়ম অনুযায়ী পাল্টে যাচ্ছেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’। যিনি হচ্ছেন, তাঁকে জান্নাতুল নাঈম বলেন, ‘মিস ওয়ার্ল্ডে যে-ই যাক না কেন, তার জন্য আমার শুভকামনা থাকবে।’
২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের নবরাত্রি হলে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়। সেদিন মঞ্চে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল সুমাইয়ার নাম ঘোষণা করেন উপস্থাপক শিনা চৌহান। এরপর আয়োজকের পক্ষ থেকে অন্তর শোবিজের চেয়ারম্যান স্বপন চৌধুরী মঞ্চে এসে জান্নাতুল নাঈমের নাম ঘোষণা করেন।
পুরো বিষয়টি নিয়ে বিচারক আর দর্শকেরা আয়োজকদের ভূমিকার সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল নাঈমকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
এরপর প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, জান্নাতুল নাঈম বিবাহিত। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৫ নম্বর বরমা ইউনিয়নের সেরন্দি গ্রামের রাউলিবাগ এলাকায়। তাঁর বাবা তাহের মিয়া ও মা রেজিয়া বেগম। চন্দনাইশ পৌরসভার কাজি অফিস থেকে পাওয়া কাবিননামা অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২১ মার্চ চন্দনাইশ পৌর এলাকার বাসিন্দা ও কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুনজুর উদ্দিনের সঙ্গে জান্নাতুলের বিয়ে হয়। বিয়ের দেনমোহর ছিল আট লাখ টাকা। বিয়ের উকিল হন মেয়ের বাবা তাহের মিয়া। বিয়েতে কাজি ছিলেন আবু তালেব। একই বছরের ১১ জুন তালাকনামায় সই করেন জান্নাতুল।
Leave a Reply