রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ।
বৃহস্পতিবার নেপিদোতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির পক্ষে তার দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে এ বিষয়ে একটি সম্মতিপত্রে (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সই করেন।
পরে মাহমুদ আলী সময় টেলিভিশনকে বলেন, এ ‘প্রথম পদক্ষেপ’, দুই দেশকে এখন ‘পরের স্টেপে’ যেতে হবে।
“এখন কাজটা শুরু করতে হবে। সব ডিটেইল এর (অ্যারেঞ্জমেন্ট) মধ্যে আছে। আমরা ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত জানাব।”
সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর আরও সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।
এ বিষয়ে সময় টিভির প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এখন যেটা হচ্ছে এই কাজটা শুরু করতে হবে। ওখানে বাড়িঘরগুলোতো জ্বালিয়ে দিয়েছে… সমান করে দিয়েছে। এগুলো, বাড়িঘরতো তৈরি করতে হবে।”
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক দপ্তরের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট চিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “বাংলাদেশে ফরম (রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিবন্ধন ফরম) পূরণ করে আমাদের ফেরত পাঠালেই যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে আনতে চাই।”
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ওই সম্মতিপত্র তৈরি করা হয়েছে ১৯৯২ সালে দুই দেশের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে, যেখানে সনাক্তকরণ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাধারণ নীতিমালা ঠিক করা হয়েছিল।
রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে। স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের এক বিবৃতিতেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কিছুদিন কূটনৈতিক আলোচনার পর ১৯৯২ সালে ওই যৌথ ঘোষণা আসে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ওই চুক্তির আওতায় মিয়ানমার সে সময় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। চুক্তি নির্ধারিত যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও ২৪১৫ জন শরণার্থীকে সে সময় মিয়ানমার থেকে আসা বলে চিহ্নিত করা হলেও মিয়ানমার তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি।
এবারের সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ‘জাতিবিদ্বেষমূলক ব্যবস্থার’ অবসান না হলে নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরা অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে এর ধারাবাহিকতায় সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করা হয়, যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিও থাকবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সুতরাং ওই চুক্তি অনুসারে এবার রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে দেড় মাস।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি বিবৃতিও দেয়।
এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট-আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে এ সপ্তাহের শুরুতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
সোমবার আসেম সম্মেলনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়। এশিয়া ও ইউরোপের ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের রাখাইনে সহি
Leave a Reply