শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :::
ডেইলি চিরন্তন অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য সিলেটসহ দেশ বিদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহীরা ইমেইলে যোগাযোগ করুন
শিরোনাম ::
শিশু মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করা হয়,গ্রেপ্তার ৪ রেকর্ড গড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন জো রোগান আবু সাঈদ হত্যা: বেরোবির ২ শিক্ষকসহ ৯ জন বহিষ্কার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদার কোন শিক্ষায় বড় করছেন মেয়েকে, জানালেন ঐশ্বরিয়া বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্যাডেট ফোরামের ৬ষ্ট প্রতিষ্টা বার্ষিকী উদজাপন ‘মাজার ভাঙচুর করে সুন্নি জনতাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না’ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার কঠোর বার্তা পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের মেসির মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন মায়ামি কোচ বন্যায় আরো মৃত্যু, সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায় প্রাথমিকের ‘শপথ বাক্য’ থেকে বাদ গেল বঙ্গবন্ধুর অংশ অন্তর্বর্তী সরকারে কে কোন দপ্তর পেলেন নোবেল বিজয়ী থেকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য উপদেষ্টা যারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত ৪২ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে : প্রধানমন্ত্রী
রক্তে ধোয়া ১৪ই ফেব্রুয়ারি লাল সালাম

রক্তে ধোয়া ১৪ই ফেব্রুয়ারি লাল সালাম

received_1529497413834127সময়টা ১৯৮৩। ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট এক দেয়ালে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা লাল-কালো অক্ষরে বিদ্রোহ আর বেদনার মিশেলে লিখেছিল ‘দিপালী সাহার রক্ত বৃথা যেতে পারেনা’।
রাত পোহাবার আগেই সামরিক সরকারের তল্পিবাহক পুলিশ বাহিনী দেয়ালে সাদা চুন টেনে মুছে ফেলে সেই স্লোগান। কিন্তু তৎকালীন ছাত্র সমাজের হৃদয় থেকে মুছতে পারেনি ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া ছোট্ট শিশু দিপালী সাহার রক্তের দাগ।
যে চেতনার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এদেশে সংঘটিত হয়েছিল বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, নির্মিত হয়েছিল উনসত্তর-একাত্তরের সৌধ, সেই চেতনার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে, দিপালী-কাঞ্চনের রক্ত ছুঁয়ে নেয়া শপথ তৎকালীন ছাত্র সমাজ ব্যর্থ হতে দেয়নি। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদের তিনটি মৌলিক দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয় সামরিক সরকার। যদিও সেই দাবি পূরণ করেনি সরকার।
কিন্তু কি ঘটেছিল সে দিন?
ফাল্গুনের আগুনরাঙা বসন্তে বাসন্তী রঙের সাথে কেন মিশে গেল মানুষের রক্ত? কেন প্রাণ দিতে হল জাফর-জয়নাল-কাঞ্চন কিংবা ছোট্ট শিশু দিপালী সাহাকে?
১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ বৃটিশ-পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মা রূপে ক্ষমতার মসনদে অধিষ্ঠিত হয় নব্য স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে। সেখান থেকেই শুরু দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় বসেই তাঁর অনুগত শিক্ষা মন্ত্রী মজিদ খানের নেতৃত্বে গঠন করে জাতীয় শিক্ষা প্রণয়ন কমিটি। রচিত হয় শিক্ষা সংকোচন ও বাণিজ্যিকীকরণের নতুন দলিল। বলা হয় উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার ৫০ ভাগ বহন করতে হবে ছাত্রদেরকে। চাকুরীজীবী, কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার অপ্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয় এই শিক্ষানীতিতে। ছাত্র সমাজ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে এই শিক্ষানীতি।
১৯৮২ সালের ২১ নভেম্বর মধুর ক্যান্টিনে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। শুরু হয় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান। ১৯৮৩ সালের ২৭-২৮ জানুয়ারি ২ দিনব্যাপী পালিত হয় সফল ছাত্র ধর্মঘট। ১৪ ফেব্রুয়ারি হাতে নেয়া হয় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী। ঐ দিনই ঘটে ছাত্রদের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ। একাত্তরের পর এতবড় ছাত্র আন্দোলন এর আগে কখনো সংঘটিত হয়নি। সকাল ১১ টায় কলা ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত মিছিল হাইকোর্টের গেটের সামনে এসে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে।
হাইকোর্ট গেট থেকে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত লম্বা মিছিল তারকাটা ব্যারিকেডের সামনে সমাবেশ শুরু করে। কিন্তু কোন প্রকার উসকানি ছাড়াই পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে। গুলিবিদ্ধ জয়নালকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পুলিশ। ছাত্রদের উপর পুলিশী তাণ্ডবের সময় শিশু একাডেমির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ছোট্ট শিশু দিপালী সাহা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। জাফর-জয়নাল-দিপালী-কাঞ্চন সহ নিহত হয় ১০ জন। পুলিশ সেদিন শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্যাম্পাসে। দুই সহস্রাধিক ছাত্র জনতাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত মেয়েদের উপরও চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। স্বৈরশাসকের গুলির তীব্র ঝাঁজালো বারুদের গন্ধ, লাঠি-বুট-টিয়ারশেল আর জাফর-জয়নাল-দিপালী-কাঞ্চনের রক্তের স্রোতে নির্মিত হলো নতুন আর এক ইতিহাস ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
কিন্তু কালের আবর্তনে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’এর চেতনা আজ হারাতে বসেছে। জীবন দিয়ে যারা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল গণতন্ত্র, শিক্ষার সর্বজনীনতার অধিকার, বিস্মৃত হতে চলেছে তাদের সংগ্রামী চেতনা। মুক্তবাজার অর্থনীতি আর কর্পোরেট সংস্কৃতির প্রবল জোয়ারে এই ঐতিহাসিক দিনটিও পরিণত হয়েছে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য বিক্রির দিন হিসাবে।
প্রেম-ভালবাসার মত স্বাভাবিক সম্পর্ককে অতিপ্রাকৃত বিষয়ে পরিণত করে ‘তুমি আর আমি’র মত চরম স্বার্থপর, সমাজ বিচ্ছিন্ন চেতনা যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে বিস্মৃত করা হচ্ছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনাকে। এ সবই করা হচ্ছে ক্যাবল আর স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে। সাম্রাজ্যবাদী প্রচার মাধ্যম থেকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস আমাদের কাছে আসেনি। এসেছে অপ-সংস্কৃতি, নোংরামি। একদিকে এদেশীয় শোষকেরা মানুষকে নিঃস্ব করেছে, অন্যদিকে তারা মানুষের বিবেককে বন্দি করতে চাইছে। শিক্ষা, নৈতিকতা, মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে আর সাংস্কৃতিক ভাবে চূড়ান্ত আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।
এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ছাত্র-যুব শক্তিকেইতো এগিয়ে আসতে হবে। ইতিহাস বলে, যখনই একটা সমাজের উপরে, মানবতা, সভ্যতা, মনুষ্যত্বের উপরে আক্রমণ এসেছে যুগে যুগে কালে কালে যৌবনের শক্তি, তারুণ্যের শক্তিই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের এই ছাত্র-যুব সমাজ কি আজকে সেই ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে? ভোগবাদের উন্মত্ততায় আর কথিত ভ্যালেন্টাইনের জোয়ারে ভাসিয়ে দিবে তাদের মূল্যবোধ-বিবকের শক্তি?

সংবাদটি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

November 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  



© All rights reserved © dailychironton.com
Design BY Web Nest BD
ThemesBazar-Jowfhowo