প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে রোগ নির্ণয়ের জন্য যন্ত্রপাতি অনেক উন্নত হলেও তা পরিচলানা করতে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইএএনইআর)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া দরকার, নইলে আমাদের একজন কেউ রোগী হলেই দৌঁড়াতে হবে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া অমুক জায়গায়, কেন? আর তারা ভালোভাবে যদি পারে, আমরা কেন পারব না। এই প্রশ্নটাই বারবার আমার মনে হয়।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদেরও পারতে হবে। সমমানের সমমর্যাদার চিকিৎসাসেবা আমরাও দিতে পারব। সেই অভিজ্ঞতা, সেই শক্তিটা আমাদের অর্জন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা বিষয় আমরা দেখি রোগ নির্ণয়ের (ডায়াগনসিস) ব্যাপারে কেন যেন কোথায় একটা বিরাট ভুল হয়ে যায়। যদিও যন্ত্রপাতি এখন অনেক উন্নত। তবে, সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক মডার্ন মেশিন এখন, সেগুলো চালানোর মতো বা সেগুলি রিডিং করার মতো বা সেগুলিকে দেখার মতো সেই ধরনের স্কিলড মানুষ তৈরি করা প্রয়োজন। সেখানে কী করতে হবে, আমার মনে হয় আপনারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কী করতে হবে বলেন, আমরা করে দেব। কোনো অসুবিধা নাই।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কোইকা সহসভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। আর স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে সেবা দেয়ার মনোভাবটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজেই আমাদের নার্স, ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্ট যারা তাদের মনে সবসময় এই কথাটাই থাকতে হবে- মানুষ যখন রোগী হয়ে আসে তখন ওষুধের থেকেও ডাক্তার নার্সদের ব্যবহার, তাদের কথাবার্তা এবং তাদের সহানুভূতিশীল মনোভাব থেকেই কিন্তু অর্ধেক রোগ ভাল হয়ে যেতে পারে। আর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধটা এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার ও নার্সদের অপ্রতুলতার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েই ডাক্তারদের একটু সংযত হবার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনের বেলা সরকারি চাকরি করবেন। আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন তারপরতো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসেব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন ঠিক ততটাই করবেন।’
চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সরকার হাসপাতাল করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা কিন্তু এখনো আমাদের উন্নত হয় নাই। এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নইলে রোগতো ছড়াতেই থাকবে। এটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।’
স্যাটেলাইটের বিবিধ ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসা সেবা, আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেতে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এখান (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ যে আমরা গড়ে তুলেছি, সারা বাংলাদেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে যে ইন্টারনেট সার্ভিস আমরা দিচ্ছি, সেটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দ্বীপাঞ্চলে আমাদের এই সেবাটা পৌঁছে দিতে পারব। এখন থেকে স্পেস অন্য দেশগুলোকে ভাড়া দিয়ে আমরা বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারব।’
Leave a Reply