সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সমাজের অসঙ্গতি দূরীকরণে এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের ভূমিকা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। মানুষের তথ্য জানার অধিকার এবং গণমাধ্যমের তথ্য জানানোর গভীর দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সামাজিক অঙ্গীকার নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে।’
বুধবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘লিগ্যাল এইড ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটি ও বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেইলি অবজারভার পত্রিকার অনলাইন সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
আলোচনায় অংশ নেন- প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব টাইটাস হিল্লোল রেমা। দিনব্যাপী কর্মশালায় ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
আইনজীবী হিসেবে পেশা পরিচালনার সময় দৈনিক সংবাদের ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক’ ছিলেন-এমন তথ্য জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিচারপতিদের বিব্রতবোধের ঘটনা ছিল ব্যাপক আলোচিত। নিদেরাস হত্যাকাণ্ড। এগুলো ছিল ‘হট নিউজ’। আমরা তখনকার সাংবাদিকরা এগুলো ভালোভাবে কাভার করেছি, ভালো রিপোটিং হয়েছিল।
এ সময় তিনি আদালতের আদেশের বাইরে বিচারকদের কথোপকথন বা বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের বিষয়ে বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল হওয়ারও আহবান জানান।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আদেশের বাইরে বিচারক এবং আইনজীবীর করা মন্তব্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলে জনমনে বিভ্রাস্ত্রির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আমরা বিচারকরা কোর্টে অনেক কথা বলি, সেগুলো মামলার স্বার্থে। এগুলো (কথোপকথন) দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলে অনেক সময় হুলস্থুল সৃষ্টি হয়।
এ সময় কোনো বিচারপতির নাম উল্লেখ না করে গত বছর আদালতে কথোপকথন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে হুলুস্থল হওয়ার ঘটনাও স্মরণ করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, আমরা আদালতে বিচারকরা অনেক কথাই বলি, কিন্ত বিদেশে সেটা হয় না। এখানে বিচারকদের কথোপকথন নিয়ে কিছুদিন আগে ব্যাপক হুলস্থুল হয়েছিল, সারা দেশেই হয়েছিল। কথোপকথন হয়েছে, অস্বীকার করা যাবে না। তবে সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। মানুষ এখন কোর্টের সংবাদ জানতে চায়, দিনে দিনে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
দুস্থদের জন্য সরকারের আইন সহায়তা কার্যক্রম সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংশ্নিষ্ট সবার মধ্যে সমন্বয় মজবুত হলে এই কার্যক্রমের আরও প্রসার ঘটবে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বিনা বিচারে আটক রয়েছে বা অর্থাভাবে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারছে না এমন বিষয়গুলো সাংবাদিকরা অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা যাতে হাইকোর্টের সব বেঞ্চে প্রবেশ করতে পারেন-সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলেও প্রধান বিচারপতি আশ্বাস দেন।
Leave a Reply