সুলতান সুমন:আসছে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সিলেটেও এর ব্যাথ্যয় ঘটেনি। কিন্তু সিলেট-১ আসন নিয়ে ধোয়াশায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ আসনটিতে এখনও কোন দলই তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। তবে আওয়ামী লীগে খুব শীঘ্রই আসছে সুখবর এমনটিই বলছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা। তাদের ধারণা দেশনেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে আসার পরই সিলেট ১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন।
তাছাড়া আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আরো জানান, সিলেট-১ আসন নিয়ে যে যাই বলুন না কেন। সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভা নেত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এই আসনটিতে থাকতে পারে চমক।
সূত্র জানায়, সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার। এমনই প্রবাদ রয়েছে দেশ জুড়ে। এর ব্যাথ্যয় ঘটেনি স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে। ফলে যে কোন রাজনৈতিক দলের কাছে এ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে খোজা হয় হেভিওয়েটদের। এর সাথে স্থান পায় বর্ণাঢ্য জীবনী ও স্থানীয় বংশ মর্যদা আর সিলেটের পরিচিত পরিবারের প্রিয় মুখ। এ হিসাব ধরা গেলে আওয়ামী লীগ সিলেটে এক আসনের কৃতি সন্তান, গুণীজন ড. এ কে আবদুল মোমেন, ছহুল হোসেন ও ড. ফরাস উদ্দিন। তিনজনই সরকারি চাকরিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে অবসরে আছেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। এর মধ্যে একজন দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় থাকলেও অন্য দু’জন দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। এই তিন ‘তারকা’র মধ্যে কে হচ্ছেন সিলেট-১ আসনে নৌকার মাঝি? এ নিয়ে কৌতূহল শুধু সিলেটের রাজনৈতিক ও সচেতন মহলেই নয়, আলোচনা চলছে স্থানীয় ভোটারদের মাঝেও। এ আসনে দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু এবার আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না-এমন কথা একাধিকবার জানিয়েছেন। তার উত্তরসূরী হিসেবে ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন নির্বাচন করবেন- সংবাদমাধ্যমে এমনটিও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ এমন কথা বললেও স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে প্রার্থী নির্বাচন করেন একমাত্র দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আওয়ামী লীগ কারো কোন কথায় নয়, দলীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তেই চলে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে কে আসছেন তা একমাত্র নেত্রীই ঘোষণা দিবেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ক্ষোভের সাথে প্রকাশ করে বলেন, যে একমাত্র অর্থমন্ত্রী ও কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কারণে সিলেট সিটি নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। ফলে সভানেত্রী ঐ বিষয়টিই মাথায় রেখে প্রার্থীতা ঘোষণা করবেন বলেই আশাবাদি দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মীরা। আর নেত্রী অবশ্যই কর্মী ও জনবান্ধব এবং স্থানীয় বংশ বিস্তার আর পারিবারিক বা বর্নাঢ্য চাকুরী জীবন দেখে প্রার্থী বাছাই করবেন বলে আশাবাদি।
এদিকে, ড. মোমেনও দীর্ঘদিন থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সম্পৃক্ত থেকে এলাকায় নেতাকর্মীদের পাশে রাখার চেষ্টা করছেন। সদ্য সমাপ্ত সিলেট সিটি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
সা¤প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন।
ছহুল হোসেনকে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা একাধিকবার বাসায় গিয়েও অনুরোধ জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের অনুরোধ উপেক্ষা করেননি তিনি। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন।
সিলেট-১ আসনে আলোচনায় থাকা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, সবাই জানে সিলেট-১ আসনটি খুব গুত্বপূর্ণ। এ আসনে খোন্দকার আব্দুল মালেক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, হুমায়ন রশিদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সজ্জন যোগ্যরাই নির্বাচন করেছেন, যাদের বয়স একটু বেশি, পরিচিতিও ব্যাপক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, আমার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আদর্শ ধরে জনবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রসর হচ্ছেন। আমি লেখালেখি করি, ছাত্র পড়াই। রাজনীতি করলে হয়েতো আরো কার্যকরভাবে করবো। যেহেতু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, নির্বাচন করবেন না, সেজন্য আমি নির্বাচন করার ইচ্ছাটা প্রকাশ করেছি।
তবে ড. ফরাস উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজকে নিয়ে বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘ওই আসনে আমার ভাইসহ তিনজনের নাম আলোচনায় আছে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন ও মেজবাহ উদ্দিন সিরাজের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে ফরাস-সিরাজ আর ইউজলেস নেইম। রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে বিশ্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হাডিন শেফারের সঙ্গে আলোচনা শেষে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী নিবাচনে আমি প্রার্থী হচ্ছি না, তবে দলের জন্য কাজ করতে চাই, করে যাব। আপনার নির্বাচনী আসনে তিনজন প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে আপনার মতামত কি-এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিত ফরাস উদ্দিন ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে সিলেট-১ আসনে গুরুত্বহীন-অপ্রয়োজনীয় আখ্যা দেন।
বলেন, ‘প্রার্থী তো থাকবেই। সেখানে আমার ব্রাদার, ফরাস উদ্দিন ও মেজবাহ উদ্দিন সিরাজের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে ফরাস উদ্দিন ইউজলেস নেম। হ্যাঁ সিরাজ-ফরাস উদ্দিন আর ইউজলেস নেম।’
আর সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, ড. ফরাস উদ্দিনের বাড়ি হবিগঞ্জে। তাছাড়া তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ফলে এ আসনে তাকে প্রার্থীতায় দিলে বিজয় নিশ্চিত করাতে অনেকখানি বিভ্রান্তিতে পড়তে হবে নেতাকর্মীদের।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন বলেন, নির্বাচনে তার আগ্রহ রয়েছে। সুস্থ আছি, তাই দেশকে আরো কিছু দিতে চাই। আমি চিন্তা করি দল নিয়ে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও আমার বাসায় এসেছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম আপনারা বুঝেন- আপনাদের থেকে কেউ প্রার্থী হলে তাকে সুযোগ দেন। কেউ প্রার্থী না থাকলে আমি দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।
‘আসলে সিলেটের মানুষও চাচ্ছেন আমি নির্বাচন করি। দেশ-বিদেশের শুভাকাঙ্খী ও নেতাকর্মীরাও আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করছেন। সবাইকেই বলেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দায়িত্ব দিলে তা যথাযথভাবে পালন করবো।’তার সর্ম্পকে সিলেট আওয়ামী লীগ ও স্থানিয়রা অনেকেই জানান, ছহুল হোসাইন সিলেটের স্থানীয় ও নগরীর কাজীটুলার বাসিন্দা। শহরজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য অগনিত আত্মীয় স্বজন। তাছাড়া তিনি চাকুরী জীবনে ছিলেন ৭ টি জেলার দায়রা জজ ও আইনমন্ত্রনালয়ের সচিব। আর দীর্ঘ দিন ছিলেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার। আর তিনির সাথে রয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সু-সর্ম্পক। এ ধরণের প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে জয় হবে আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জানান, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তাছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দিবে এবং দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি কাজ করে যাবেন। যদি দল তাকেও মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি তা মাথা পেতে নিবেন। তিনি আরো জানান, প্রার্থীর মনোনয়ন বা বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত দিবেন একমাত্র দলীয় সভানেত্রী। তাই কেউ কোন ঘোষনা দিলেও তাতে কিছু হবে না। আর সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চায় কর্মী বান্ধব, জনবান্ধব এবং স্থানিয় নেতাদের।
Leave a Reply