আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি নানা হিসাব চলছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের চিঠি দিলে তাতে সাড়া দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপকে রাজনীতিতে সুবাতাস হিসেবে দেখছে বিশ্লেষকরা।
তবে সংলাপের আলোচনায় নিজেদের ‘অসন্তুষ্টি’র কথা জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক দল বিএনপি। পরে ছোট পরিসরে আবারো সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। আগামী বুধবার এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
সংলাপের পর থেকে সরকারি দল ও বিরোধী জোট অনেকটা নমনীয় সূরে কথা বলছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে সাত দফা দাবি দিয়েছিল বুধবারের সংলাপে সেখান থেকে অনেকটা সরে আসতে পারে এ রাজনৈতিক জোট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিশ্বস্ত সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদে বহাল থাকলেও আপত্তি থাকবে না ঐক্যফ্রন্টের। সাত দফা দাবির জায়গায় মূলত তিনটি দফাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। তবে এতে তাদের কিছু শর্ত রয়েছে।
আপাতত যে তিনটি দাবিকে ঐক্যফ্রন্ট প্রাধান্য দিচ্ছে সেগুলো হচ্ছে;
১. বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা।
২. সংসদ ভেঙে দেয়ার পর নির্বাচনকালীন যে সরকার গঠিত হবে সেই মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো থেকে মন্ত্রিত্ব দেয়া। স্বরাষ্ট্র বা জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সেই মন্ত্রীদের অধীনে দেয়া।
৩. বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া এবং তিনি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এজন্য তার সাজা স্থগিত করা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু সেই দাবিতে ছাড় দিতে পারে এ রাজনৈতিক জোট। সংসদ ভেঙে দিয়ে যদি নির্বাচন করা হয় তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকবে না ঐক্যফ্রন্ট।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও বিএনপির একজন আইনজীবী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমাদের লক্ষ্য সরকারকে এটা জানানো যে সংবিধানের মধ্য থেকে নির্বাচনের অনেক উপায় আছে, যা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ করতে এবং সব রাজনৈতিক দলের আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। কেননা, সরকার বলছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো পন্থা বের করা বা সংবিধান সংশোধন তারা করবেন না।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ দফা দাবি পেশ করে। ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলো হলো:
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩. বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোটকেন্দ্র, পুলিং বুথ ও কন্ট্রোলরুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
Leave a Reply