১৮ মাস বয়সী মেয়ে আরশিয়া হককে কোলে নিয়ে মানুকা ওভালের গ্যালারিতে ছিলেন সিনথিয়া রেজাও। তাঁর মতো হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি দূর-দূরান্ত থেকে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন ক্যানবেরায়। তবু ওই ভদ্রমহিলার কথা আলাদাভাবে বলার কারণ গতকালকের দ্য ক্যানবেরা টাইমস পত্রিকার প্রথম পাতার অনেকটা জুড়েই যে তিনি। ছয় কলামের বিশাল ছবির ইনসেটে ছিলেন ‘বাঘ’ সেজে যাওয়া ফাহিমুল হকও। অবশ্য মাশরাফি বিন মর্তুজাদের ঘিরে এটি বিদেশ-বিভুইয়ে দেশি দর্শক উন্মাদনার খণ্ডচিত্র মাত্র। মাঠে থেকে এর বিশালতা ক্রিকেটাররা আরো বেশি উপলব্ধি করেছেন। ক্যানবেরা থেকে কাল ব্রিসবেনের ফ্লাইট ধরার আগে সৌম্য সরকারই যে উপলব্ধির কথা বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচে মনেই হয়নি যে আমরা বাইরে কোথাও খেলতে এসেছি। এত বাংলাদেশি দর্শক!’
খেলতে চায় বাংলাদেশ
এত দর্শকের সামনে খেলতে নেমে বাড়তি কিছু করার তাগিদও অনুভব করেছেন মাত্রই দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলা এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ‘খুব ভালো লাগে দেখলে। মনের মধ্যে জেদ তৈরি হয় ভালো খেলার। তাদের জন্য ভালো কিছু দেওয়ার দায়িত্ববোধও চলে আসে।’ আফগানদের ১০৫ রানে উড়িয়ে দিয়ে প্রথম ‘গুরুদায়িত্ব’টা সেরেছেন মাশরাফিরা। তবে এবার সামনে আসল পরীক্ষা। ব্রিসবেনের গ্যাবায় ২১ ফেব্রুয়ারির ম্যাচেও নিশ্চয়ই প্রবাসী বাংলাদেশিরা গ্যালারিতে ভিড় করবেন। তবে সেদিন যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবেন না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া হলে সে রকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনাই তো থাকে না। এটাও স্বাভাবিক যে বেশির ভাগ ক্রিকেট বিশ্লেষকই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বাংলাদেশের খুব বেশি সম্ভাবনা দেখবেন না। কিন্তু প্রথম ম্যাচের সাফল্যে উজ্জীবিত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের এমন আলোচনায় একমত হওয়ার কারণ নেই। হলেন না সৌম্য সরকারও, ‘আমার প্রথম থেকেই বিশ্বাস অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমরা ভালো করব। আমার এখনো সেই বিশ্বাস আছে। বাকিটা ২১ তারিখে দেখা যাবে।’
কিন্তু আসলেই দেখা যাবে তো? সম্ভাব্য সাইক্লোন মার্সিয়ার জন্য এই ম্যাচ হওয়া নিয়েই এখন যত সংশয়! ম্যাচ না হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি, তাতে আবার বাংলাদেশেরও প্রাপ্তির সম্ভাবনা যখন, তখন কাউকেই এ নিয়ে একদম উৎসাহী মনে হচ্ছে না। বরং অস্ট্রেলিয়ান দর্শকদেরও যেন কিছু একটা দেখানোর তাড়নার কথাই শোনা গেল বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের মুখে, ‘ম্যাচটি না হলে খারাপই লাগবে। তা ছাড়া এ ম্যাচ দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শক টিকিটও কেটেছেন। তাদেরও আমরা ভালো খেলা উপহার দিতে চাই।’
বিদেশের মাঠে দেশের দর্শকদের জন্য আদর্শ উপহার অবশ্য মুশফিক-সাকিব-মাশরাফিদের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্সই। এত পারফরমারের ভিড়ে অবশ্য সৌম্য সরকারের কথাও একটু বলতে হয়। বিশ্বকাপে আসার আগে খেলেছিলেন মোটে একটি ওয়ানডে। তাও আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র ওয়ানডেতে ২০ রান উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তবু আফগানদের বিপক্ষে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৫ বলে ২৮ রানের ইনিংসেও বড় মঞ্চের জন্য তৈরি হতে চাওয়ার প্রতিজ্ঞা ছিল। ব্রিসবেনের ফ্লাইট ধরার আগে সে প্রতিজ্ঞার কথা মুখেও উচ্চারণ করলেন তিনি, ‘বাংলাদেশ থেকে আসার সময়ই আমি বলে এসেছিলাম যে এখান থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে পরিচিত করে যেতে চাই। খারাপ খেললে তো নিশ্চয়ই আমার পরিচিতি বাড়বে না। ভালো করলেই সবাই আমাকে চিনবে। আমি সেই চেষ্টাই করছি। আশা করছি আমি ভালো করবও। আমার নিজের মধ্যে সেই তাগিদটা আছে। ভালো খেলেই নিজেকে চেনাতে চাই।’ অস্ট্রেলিয়া অবশ্য চায় খেলা হলে চার ফাস্ট বোলার দিয়ে বাংলাদেশের টুঁটি চেপে ধরতে। আর মাশরাফিরা এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য এতটাই মরিয়া যে প্রকৃতির সৌজন্যে পয়েন্ট পাওয়ার ব্যাপারটি তাঁরা মানতেই পারছেন না। কারণ সেটি হলে যে লড়াই করে মন জয় করে নেওয়ার মতো বিশাল প্রাপ্তির সম্ভাবনাই থাকে না!
Leave a Reply