সিলেট নগরীর নিরাপত্তা জোরদারে এই প্রথমবারের মতো বসানো হচ্ছে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ক্যামেরা। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। আইপি ক্যামেরা মূলত ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে কাজ করে। এসব সিসি ক্যামেরা অপরাধীর ছবি ডিটেক্ট (চিহ্নিত) করে সিগন্যাল দিতে সক্ষম। এক্ষেত্রে এসব ক্যামেরা নিজের সার্ভারে থাকা তথ্যের সহায়তা নেয়। আবার পুলিশও ছবি দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে অপরাধী সনাক্ত করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এবং সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) সমন্বিত উদ্যোগে সিলেট নগরীতে ১১০টি আইপি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এতে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ‘ডিজিটাল সিলেট সিটি’ প্রকল্পের আওতায় এসব ক্যামেরা বসছে নগরীতে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা সিলেটভিউকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ক্যামেরা থাকলেও সিলেটে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে প্রথমবারের মতো।’
তিনি জানান, আইপি ক্যামেরা দিন-রাত সবসময় কাজ করতে সক্ষম। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীদের আনাগোনা চিহ্নিতকরণ এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে এসব ক্যামেরা সাহায্য করবে। ১১০টি আইপি ক্যামেরার মধ্যে কিছু সংখ্যক বসানো হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বসানোর কাজ চলছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রায় পুরো নগরীই কাভার দেয়া সম্ভব।
পুলিশ জানিয়েছে, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, কোর্টপয়েন্ট, ক্বিনব্রিজের মুখ, কদমতলি, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, শাহজালাল (রহ.) মাজার এলাকা, শাহপরান (রহ.) মাজার এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল এলাকায় আইপি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
এসব ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায়। কাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, যেসব আইপি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে, এগুলোর একটি শক্তিশালী সার্ভার রয়েছে। এই সার্ভারে এসএমপির তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ছবি ও তথ্য থাকবে। নগরীর কোথাও আইপি ক্যামেরায় ওই অপরাধীর চলাফেলা ধরা পড়লে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সিগন্যাল বেজে ওঠবে। তখন পুলিশ ওই অপরাধীকে গ্রেফতারে পদক্ষেপ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে আইপি ক্যামেরা ‘ফেস রিকগনিশন (এফআর)’ ফিচার ব্যবহার করবে। আইপি ক্যামেরা সাধারণ সিসি ক্যামেরার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট ভিডিও ও ছবি ধারণ করে।
পুলিশ চাইলে যে কোনো অপরাধীর ছবি দিয়ে আইপি ক্যামেরার সার্ভারে অনুসন্ধান (সার্চ) করতে পারবে। ওই অপরাধী যদি আইপি ক্যামেরার আওতাভুক্ত কোনো এলাকায় চলাফেরা করেন, তবে সার্ভার তা সনাক্ত করে জানিয়ে দেবে।
আইপি ক্যামেরার ‘অটো নাম্বার প্লেইট রিকগনিশন’ ফিচারের মাধ্যমে যে কোনো যানবাহনের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করতে পারবে পুলিশ। এক্ষেত্রে অপরাধে জড়িত কোনো যানবাহনের নাম্বার দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে নগরীতে সেটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হবে।
নগরীতে আইপি ক্যামেরা বসানোর এই প্রকল্পে ক্যামেরা, সফটওয়্যারসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’। সিলেটে হুয়াওয়ের পার্টনার (সহযোগী) হিসেবে কাজ করছে গ্লোবাল ট্রেড করপোরেশন।
গ্লোবাল ট্রেড করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মছনুল করিম চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘আইপি ক্যামেরা বসানোর জন্য ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১১টি ক্যামেরা বসানো হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আইপি ক্যামেরাগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে।’
Leave a Reply