প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সদর দফতরে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনরা
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় জাতিসংঘের কনফারেন্স রুম-৪ এ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, নিউইয়র্কের যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, চলচ্চিত্র শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, ফটোগ্রাফার এবং প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন জাতিসংঘে কিউবার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত আনা সিলভিয়া রদ্রিগেজ অ্যাবাসকাল
বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন জাতিসংঘে কিউবার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত আনা সিলভিয়া রদ্রিগেজ অ্যাবাসকাল
বিকেলে জাতিসংঘ সদরদফতরে আয়োজিত শোক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এসময় দেশি-বিদেশি অতিথিরা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর জাতির পিতার জীবন ও কর্ম এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ এইচ মনসুর।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ এইচ মনসুর।
আলোচনা অনুষ্ঠানটিতে ‘বঙ্গবন্ধু ও বহুপাক্ষিকতাবাদ’ বিষয়ে কী-নোট স্পিচ দেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী প্রথমবারের মতো পালিত
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী প্রথমবারের মতো পালিত
অনুষ্ঠনে বক্তব্য রাখেন ভারত, সার্বিয়া ও কিউবার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং প্যালেস্টাইনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক।
প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি জাতির পিতার সঙ্গে তার কর্মজীবনের নানা ব্যক্তিগত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে কীভাবে তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু অনুষ্ঠানে সেসব স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত
বহুপাক্ষিকতাবাদকে এগিয়ে নেওয়াসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু যে সব অবদান রাখেন তার উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ ধারণ করেই বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতাবাদের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে বিশ্বসভায় ভূমিকা রেখে চলেছে।’’
অনুষ্ঠানে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবর উদ্দিন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গভীর বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ভারতবাসী তাদের অকৃত্রিম বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা জানতে পারে তখন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নেয়।’
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানের পরের পর্বে ছিল আলোচনাসভা
জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানের পরের পর্বে ছিল আলোচনাসভা
অনুষ্ঠানে সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিকা দাচিচ’র বাণী পড়ে শোনান জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মিলান মিলানোভিচ। এই বাণীতে সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাবেক যুগোশ্লোভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ ব্রোজো টিটোর যে বন্ধুত্ব ও গভীর সম্পর্ক তা তুলে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি ‘বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, আর আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাও এটা যে আমি তাদেরকে অনেক বেশি ভালোবাসি’ -এর কথাও উল্লেখ করেন।
কিউবার রাষ্ট্রদূত আনা সিলভিয়া রদ্রিগেজ অ্যাবাসকাল তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কিউবার দেওয়া অকুণ্ঠ কূটনৈতিক সমর্থনের কথা তুলে ধরেন। নির্যাতিতের পক্ষে ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব, প্রচেষ্টা ও সাহসের কথা বলতে গিয়ে তিনি ১৯৭৩ সালে কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, তাই হিমালয় দেখার সাধ আর আমার নেই’ এর কথাও উল্লেখ করেন।
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত পর্ব
আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত পর্ব
প্যালেস্টাইনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ এইচ মনসুর ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ ৪৪ বছর পর এই জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে যা এই বিশ্বনেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি অনন্য উদ্যোগ।”
পরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবুল মোমেন আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পালনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং মন্ত্রী ও কূটনীতিকবৃন্দকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানান।
Leave a Reply