মানব জাতির ইতিহাসে মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ঘটনা গুলি অপরাজেয় প্রেরনার উৎস । এমনই এক স্মরণীয় ঘটনার কেন্দ্রীয় শক্তিরুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন বঙ্গবীর ওসমানী ।
এবং এঘটনাটির নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ।
ওসমানীর নামে বহু প্রতিষ্টানের নামকরণ করা হয়েছে । তাঁর নামের ধ্বনি আজ ঢাকা সিলেট তথা বাংলাদেশের সর্বত্র প্রকাশিত ও পরিচিত । কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য যে তাঁর জন্মের শহর সুনামগজ্ঞে একটা স্কুল ,কলেজ, মাদ্রাসা তো দূরের কথা একটি রাস্তাও তাঁর নামে নামকরণ করা হয়নি ! এই ক্ষণজন্মা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর ওসমানী ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বৃহত্তর সিলেটের সুনামগজ্ঞে জন্ম গ্রহণ করেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন । তার পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান সিলেটের ওসমানী নগরের দয়ামির গ্রামের অধিবাসি ছিলেন । তিনি ১৯৩১ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্টেইট এর চাকুরী নিয়ে একসময় আসামের জেলা প্রশাসক হয়েছিলেন । চাকুরী থেকে অবসরের সময় তিনি আসামের “ল্যান্ড রেকর্ডস “ এর ডাইরেক্টর ছিলেন । ওসমানীর জন্মের সময় তাঁর বাবা সুনামগজ্ঞ মহকুমা প্রশাসক ছিলেন ।তাঁর পিতামহ মি:আব্দুস সোবহান অতি জ্ঞানি ও ধর্ম পরায়ন ছিলেন ।
ভিক্টোরিয়া আমলে যে সব মহিলা গ্রাম্য পরিবেশের মধ্যে নিজ গৃহে শিক্ষা-দিক্ষা নিয়ে যে কোন মহলে প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন ওসমানির মাতা জোবেদা খাতুন ছিলেন উজ্জ্বল প্রতিক ।তিনি বাংলা , ইংরেজী , আরবী ও ফার্সীতে শিক্ষিতা ছিলেন ।তিনি ১৯৫৫ সালে মারা যাবার পর ঐ দশকেই ওসমানির পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান হজ্জ্বে যান এবং মক্কায় মৃত্যুবরণ করেন । তাঁর নানা আকিল চৌ: বিশ্বনাথ উপজেলার রায়কেলির বিশিষ্ট জমিদার ।
তাঁর বড় ভাই মি: নুরুল গণি ১৯৩০ সালে এমসি কলেজ থেকে বি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন এবং ভারতের গোহাটি থেকে আইনে লেখাপড়া করে সরকারের প্রসাশনিক পদে নিযুক্ত হন । ১৯৭৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।ওসমানির বড় বোন ছদরুন নেছা খাতুন ১৮ বছর বয়সের ইন্তেকাল করেন ।
ওসমানী ছোটকালে আতা নামে পরিচিত ছিলেন ।১৯২৩ সালে পাঁচ বছর বয়সে তাঁর মায়ের কঠোর অনুশাসন ও গৃহশিক্ষকের তত্বাবাধানে প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয় । ১৯২৩ গোহাটির কটন স্কুলে এবং সিলেট গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন উত্তীর্ন হয়ে ইংরেজীতে বিশেষ দখলের জন্য তিনি প্রীটোরিয়া প্রাইজ লাভ করেন । ১৯৩৪ সালে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী হন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের ও সমসাময়িক ছাত্রদের শ্রদ্ধা অর্জন করেন ।
ওসমানী ১৯৩৬ সালে জহরলাল নেহেরু দ্বারা উদ্ভোধিত জিন্নাহ লক্ষ্মৌর সার্ভেন্ট অব ইন্ডিয়া সোসাইটি হলে অনুষ্টিত সর্বপ্রথম নিখিলভারত ছাত্র সম্মেলনে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যতম ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন।
১৯৩৮ সালে তিনি কলা বিভাগে ডিগ্রী লাভ করেন । এবং চুড়ান্ত পরিক্ষার পূর্বেই তিনি ১৯৩৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন । ১৯৪০ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন । ১৯৪১ ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালে সর্বকনিষ্ঠ মেজর হন । ১৯৪৬ সালে বৃটিশ সেনাবাহিনীর সিলেকশন কমিটি কর্তৃক লংকোর্সের জন্য মনোনীত হন । তাঁর এই বিশাল কর্মময় জীবনের জন্য আমরা দেশবাসী গর্বিত ।
তাই জেনারেল ওসমানির জন্মের শহর সুনামগজ্ঞ হওয়ায় যেমন আমরা গর্বিত তেমনি মহান স্বাধীনতার প্রায় ৪৭ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের নামে তাঁরই জন্ম শহরে কোন স্কুল – কলেজ – মাদ্রাসা বা কোন রাস্তা নাম করণ না হওয়াটা সুনামগজ্ঞ বাসীর জন্য লজ্জাজনকও বটে ।।
Leave a Reply