শুভ কাজে দেরি করতে নেই। কিন্তু পরিবারের বাধার কারণে দেরি হয়েই গেল। শুধাংশু বৈরাগী বর্তমানে ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন। নিভা রাণীর বয়সও এখন ৫০-এর কোঠায়। ততে কী? অবশেষে প্রেমেরই জয় হল। ৩৬ বছর প্রেম করার পর সকল বাধা পেরিয়ে অবশেষে বিয়ের পিড়িতে বসলেন এ প্রেমিকযুগল। ‘প্রেমের মড়া জলে ডোবে না’- প্রচলিত এ কথাটি ফের তারা প্রমাণ করলেন।
নানা বাধার কারণে শুধাংশু-নিভার বিয়ে আটকে ছিল। তবে তারা কেউই নিজের আলাদা জীবন বেঁছে নেননি। সংকল্প করেছিলেন এ জীবনে মিলন না হলে পরজনমে মিলিত হবেন কিন্তু অন্য কারও সঙ্গে জীবন জড়াবেন না। এ কারণে এলাকায় স্বঘোষিত চিরকুমার সংগঠনের সভাপতি হিসেবে শুধাংশুর নামটাও ছড়িয়ে যায়। দুজনেই সুপ্রতিষ্ঠিত। এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে শুধাংশুর ব্যাপক পরিচিতি। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী হয়েছেন কয়েকবার। অন্যদিকে প্রেমিকা নিভা রাণী বর্তমানে একটি এনজিও সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাকী জীবনযাপন করছিলেন।
অবশেষে এলাকার কিছু মানুষের উদ্যোগে দুই পরিবারের সম্মতিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ১১টায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী অগ্নি সাক্ষী রেখে মালা বদলের মাধ্যমে প্রেমিকা নিভার বাড়িতে বসে ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে হয় এ প্রেমিক যুগলের। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কতগুলো বছর। এতে আক্ষেপ থাকলেও তারা আজ মহাখুশি।
শুধাংশু বৈরাগী জানান, তাদের প্রেম সার্থক হয়েছে। জয় হয়েছে ভালোবাসার। নববধূকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চান। সত্যিকারের প্রেম কখনো বিফলে যায় না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অনেক প্রেমিক-প্রেমিকারা ভুল করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এটা বোকামি। ধৈর্য্য ধরতে হবে। ভালবাসার জয় হবেই।
দীর্ঘদিনের প্রেমের পর এ বিয়ের ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী গ্রামে। বিয়ে দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকেও হাজারো মানুষ ভিড় জমায় কনের বাড়িতে। অনেকে এই প্রেমিকযুগলকে আখ্যা দিয়েছেন এ যুগের রজকিনী-চণ্ডীদাস বলে।
জানা গেছে, স্কুলজীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মৃত লোকনাথ বৈরাগীর ছেলে শুধাংশু বৈরাগীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খড়মখালী গ্রামের মৃত নিরোধ রায়ের কন্যা নিভা রাণী রায়ের। পরবর্তী সময়ে কলেজজীবনে এসে সম্পর্ক আরো পূর্ণতা পায়। শিক্ষাজীবন শেষ করে দুজনে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলেও নানা সমস্যায় সেটি আটকে যায়। বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও নানা মতবিরোধ থাকায় তাদের ঘর বাঁধা আর হয়ে ওঠে না। এভাবে কেটে যায় প্রেমের প্রায় ৩৬টি বছর।
এলাকাবাসী জানান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের পর থেকে বয়সের কথা না ভেবে এই প্রেমিক জুটির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকার সচেতন মহলের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চলে দুই পরিবারকে বিয়েতে রাজি করান।
লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-চণ্ডীদাসের মতো তাদের প্রেমকাহিনি এখন এলাকার লোকজনের মুখে মুখে।
Leave a Reply