ডেইলী চিরন্তনঃ আগামীকাল১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বরেণ্য সাংবাদিক ও গায়ক সঞ্জীব চৌধুরীর ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই বেদনাবিধুঁর ক্ষণে সবার সবচে প্রিয় নবজাগরণের মানুষটিকে খুব মনে পড়ছে। আজীবন এই মানুষটি তাঁর রচিত গান, কবিতায় ও সাংবাদিকতায় প্রগতিশীলতা ও গণতন্ত্রেও কথা বলে গেছেন সাহসি উচ্চারণে। বলে গেছেন দুঃখী-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের মর্মবেদনার কথামালা। ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো চাঁদ, আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছিলো চাঁদ’, ‘রিকশা কেন আস্তে চলে না’, ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘ওই কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না’, ‘দুঃখ ব্যথায় মুখটা যে নীল’, ও ‘সমুদ্র সন্তান’সহ শত শত জননন্দিত গানের গায়ক ও ফিচার সাংবাদিকতার পথিকৃত সঞ্জীব চৌধুরী নেই তা ভাবতেই পারি না। নিপাট ভালো মানুষটি কেন যে অকালে চলে গেলেন সবাইকে কাঁদিয়ে? এ প্রশ্নটি এখনো মনের ভুবনে ঘুরপাক খায়। আহারে ২০০৭-এর ১৯ নভেম্বর। তখন রাত প্রায় ১২টা। সবার স্রোত অ্যাপলো হাসপাতালের দিকে। শোকের মাতম হাসপাতালের করিডোরে। বাতাস ভারী। এদিক সেদিক ছুটছে সবাই। মস্তিষ্কে রক্তক্ষণ তার। লাখো ভক্তের প্রার্থনা। মুখে হাত ঠেসে কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা। কিন্তু কিছুতেই কিছু নয় । চলে গেলেন সঞ্জীব চৌধুরী। মাত্র ৪৫ বছর। স্ত্রী নাসরীন শিল্পী আর ৫ বছরের কিংবদন্তীকে নিয়ে ছিল সংসার। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬২ জন্মগ্রহণ করেন তিনি খুব প্রিয় দাদা। এত অল্প সময়ের মধ্যে জগৎ মঞ্চ, রাজপথ, বন্ধুত্ব, গান-গিটার আর আড্ডা ছেড়ে চলে গেলেন ক্ষণজন্মা মানুষটি। হলেন দলছুট। প্রিয় সঞ্জিব চৌধুরী ১৯৯১-তে যোগ দিলেন দৈনিক আজকের কাগজে। সৃষ্টিশীলতার নতুন অধ্যায় উন্মোচন করলেন। কয়েক দশকের কাটখোট্টা ভাষার অবসান। নতুন ফ্লেভার, নতুন স্বাদ। হাতে পত্রিকা নিয়েই-‘সঞ্জীব চৌধুরী’। কে এ? দ্রæত নামডাক ছড়ালো চতুর্দিক। পাঠকদের সঙ্গে এতদ্রæত কমিউনিকেশন! ১৯৯২-এ দৈনিক ভোরের কাগজে। এবার সরাসরি পাঠকদের প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা। সে বছর ‘মেলা’ শিরোনামে একটি নিয়মিত সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা চালু করেন। সাড়া পড়ে ব্যাপক। এরপর ২০০৫-এ দৈনিক যায়যায়দিন এ চিফ ফিচার এডিটর হিসেবে নিযুক্ত করেন নিজেকে। রাজনীতি, কবিতা, গায়েন, সাংবাদিকতা আর কী প্রয়োজন একজন সৃষ্টিশীল মানুষের। নাম ডাকের সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত জুটল বহু। হলেন আড্ডার মধ্যমণি। সঞ্জীব, সঞ্জীবদা কয়েক সম্বোধনে চেনে সবাই। শুধু তাই নয়, গল্প, নতুন স্বপ্ন, বা সাপোর্ট থেকে সবকিছুতেই এ মানুষ হলেন বটবৃক্ষ। ১৯৯৬-এ বাপ্পা মজুমদার নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল। নাম দলছুট। নিজের কবিতা, চিন্তা আর ভাবনার ভেলা দলছুট। ১৯৯৮-এ প্রথম অ্যালবাম ‘আহা’। ব্যান্ড জগতের দুঃসময়ে কে ধরল হাল? অনেক শ্রোতার এ প্রশ্ন ? সাড়া ফেললেন চতুর্দিকে। বেহিসেবি, বোহেমিয়ান জীবনে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়- অভিনয়। এ ঢেঁকিও গিললেন। একজন সাংবাদিক, কবি, ছড়াকার, লেখক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, অভিনেতার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। এই ভালো মানুষটির জীবন বর্ণাঢ্য ও রঙিন।
তাঁর জীবনের নীতি-নৈতিকতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে সুন্দর ও শন্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে হবে। তাহলেই প্রিয় সঞ্জীব দাদার আত্না স্বর্গ সোধায় মহিমান্বিত হয়ে যাবে সহজেই।
Leave a Reply