বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ শেন জার্গেনসন। কোচ ছিলেন মাশরাফি-সাকিবদের। হঠাৎ করে দায়িত্ব ছেড়ে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন জার্গেনসন। কালও ফের আলোচনায় উঠে আসেন ফিজির বর্তমান কোচ। ফিজির কোচ, অথচ এখন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ! বাংলাদেশকে হারানোর জন্য স্কটল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট ভাড়া করেছেন জার্গেনসনকে। তার কাছ থেকে ধার করা বুদ্ধিতে বাংলাদেশকে কুপোকাত করতে চায় স্কটিশরা। এ নিয়ে স্কটিশরা উত্তেজিত হলেও বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই টাইগারদের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের। বরং গ্রুপের যে তিন ম্যাচ বাকি, তার দুটিতে জিততে চান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
আফগানিস্তানকে হারানোর অন্যতম নায়ক সাকিব। ব্রিসবেনের ওলন গাব্বায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা না হওয়ায় নামতে পারেননি। বড় ব্যবধানে হারা শ্রীলঙ্কা ম্যাচে সবাই যখন ব্যর্থ, তখনো তার ব্যাট কথা বলেছে। নির্ভরতার প্রতীক সাকিবকে ঘিরেই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট আবর্তিত। দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সাকিবরা বয়ে আনেন ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর স্বপ্নও। দেশবাসীর স্বপ্নের কথা ভালোই জানেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। জানেন বলেই প্রতিপক্ষকে বিবেচনায় না এনে নিজেদের নিয়েই ভাবছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘ম্যাচে স্কটল্যান্ড কি করবে সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা কি করতে পারি সেখানেই আমাদের ফোকাস। আগের ম্যাচগুলোতে কি কি ভুল করেছি, কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে, সেসব নিয়েই ভাবছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে অবশ্যই জিতব।’
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ভালো সূচনা করে টাইগাররা। ব্রিসবেনে পরের ম্যাচে নামা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। খেলতে না পারলেও প্রাপ্তি ফল কিন্তু শূন্য নয়। বৃষ্টি ভাগ্যে পেয়ে যায় এক পয়েন্ট। মেলবোর্নে তৃতীয় ম্যাচে হোঁচট খায়। হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। দ্বীপরাষ্ট্রের কাছে হারে মানসিকতায় ধাক্কা খেলেও ছিটকে পরেনি রেস থেকে। টিকে আছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে। এজন্য অবশ্য পরের তিন ম্যাচের দুটি জিতলেই হবে। গাণিতিক হিসাবে এজন্য ইংল্যান্ডকে হারালেই হবে। কিন্তু টাইগারদের সহ অধিনায়ক বাকি তিন ম্যাচের দুটিতে জিততে চান, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো। প্রস্তুত হওয়ার জন্য আমরা কয়েকদিন পেয়েছি। ফিল্ডিংয়ে আমরা ভালো কয়েকটা সেসন পার করেছি। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি ভালো। এখন শুধু মাঠে প্রয়োগ করার বিষয়।’
ক্রিকেটের স্বর্গ মেলবোর্নে খেলার উত্তেজনায় খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন টাইগাররা। তার খেসারত দেন তিন ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিং মিস করে। লঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে টাইগারদের শারীরিক ভাষাও ছিল নেতিবাচক। তাই ম্যাচে লড়াইও করতে পারেননি মাশরাফিবাহিনী। লঙ্কান ম্যাচের পুনরাবৃতি যাতে না হয়, সেজন্য ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসাল পুরো দলকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করেছেন ক্যাচিং করিয়ে। এই অনুশীলন সেসন উপকার করবে বলেন সাকিব, ‘আগের ম্যাচগুলোতে আমরা ভালো ফিল্ডিং করেছি। সেদিন কিছু মিস করেছি। ক্যাচ মিস খেলারই অংশ। আশা করি পরের ম্যাচে এই ভুলগুলো আর হবে না।’
বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিন। এই স্পিন দিয়েই বধ করার পরিকল্পনায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট তিন বাঁ হাতি স্পিনার নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিন ম্যাচ হয়ে গেলেও স্পিনাররা তেমন কোনো ভীতির সঞ্চার করতে পারেননি প্রতিপক্ষ শিবিরে। তাই স্কটিশদের বিপক্ষে কতটা সুবিধা পাবেন স্পিনাররা, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের, ‘স্পিনারদের জন্য এখানকার উইকেট কতটা হেল্পফুল, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদি হেল্প পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের স্পিনাররা ভালো করবেন। কিন্তু যে দুটি ম্যাচ খেলেছি, তাতে স্পিনাররা কোনো সুবিধা পাননি। এজন্য আমার মনে হয়, পেসারদের দায়িত্বটা অনেক বেশি।’ স্কটল্যান্ডকে হারালে কোয়ার্টার ফাইনাল অনেক সহজ হবে টাইগারদের। অবশ্য এজন্য ইংল্যান্ডকে হারাতে হবে। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে এই দুই ম্যাচই জিততে চান সাকিব, ‘সোজা হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে আমাদের দুটি ম্যাচ জিততে হবে। বাকি তিন ম্যাচের দুটি আমরা জিততে চাই।’ দলের সেরা ব্যাটসম্যান। অথচ ব্যাটিং করেন মিডল ও লেট অর্ডারে। এই ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন চান দেশসেরা ক্রিকেটার, ‘ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করেন কোচ ও অধিনায়ক। তারা যা করবেন, আমার মনে হয় না অন্যরা এর সঙ্গে দ্বিমত করবেন।’
অপরূপ সৌন্দর্যের নেলসনে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশকে সামনে থেকে গাইড দিতে প্রস্তুত সাকিব। সেটা করেও দেখাচ্ছেন। এখন দেখাতে চাইছেন স্কটিশদের বিপক্ষেও।
Leave a Reply