সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার ১০ দিনেও রিপোর্ট পাচ্ছেন না অনেকেই। ল্যাব সংশ্লিষ্টরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে এখানে ৪৫০টি করে নমুনা আসে মধ্যে গড়ে ১৫০টির মতো নমুনা পরীক্ষা হয়। আর এজন্যই ল্যাবে বিপুলসংখ্যক নমুনা পরীক্ষার জন্য পড়ে আছে।
এদিকে দশদিন আগে নমুনা পাঠিয়েও এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি অনেকে। ফলে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। রিপোর্ট না জানায় শঙ্কা আর আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। রিপোর্ট না পাওয়ায় অনেকেই আগের মতো পরিবারসহ অন্যদের সঙ্গে মেলামেশাও করছেন। এতে বাড়ছে করোনা ঝুঁকি।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবে এখনও প্রায় এক হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছে নতুন-নতুন নমুনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকবল সঙ্কট ও নমুনা প্রস্তুতের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সঙ্কটের কারণে চাইলেও দিনে অধিকসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সিলেটে আরও একাধিক ল্যাব স্থাপন প্রয়োজন।
জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় গত ১০ দিনে ৪৪ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়া গেছে মাত্র ৪ জনের। বাকি ৪০টি নমুনার রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন রোগীরা। এই ৪ জনেরই রিপোর্টে নেগেটিভ বলে জানান বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত ওসমানীনগর) ডা. এইচ এম শাহরিয়ার।
সিলেটের ৩টি উপজেলায় নমুনা দেয়া একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ৯ থেকে ১০দিন আগে উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ওসমানী হাসপাতালের ল্যাবে পাঠিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি তারা। ফলে রোগীসহ তাদের পরিবারের সকলে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
ওসমানীর পিসিআর ল্যাবের চলতি সপ্তাহের পরীক্ষার তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, এখানে গত শুক্রবার ১৩৬টি, শনিবার ১৭৮টি, রোববার ১৫৬টি, সোমবার ১৮০টি ও গতকাল মঙ্গলবার ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
ওসমানীতে পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটের বাইরের ল্যাবেও নমুনা পাঠানো হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকায় হবিগঞ্জের ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়।
কম সংখ্যক পরীক্ষা হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও সিলেট করোনাভাইরাস আইসোলেশন ইউনিটের সভাপতি অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এখানে নমুনা প্রস্তুতের জন্য যে আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের দরকার তা যথেষ্ট নেই। বিশেষত কেবিনেট সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া লোকবল সঙ্কটও রয়েছে। যে লোকবল রয়েছে তারা সকাল থেকে কাজ শুরু করে নমুনা প্রস্তুত করতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই ল্যাবে প্রতিবার ৯৪টি করে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। আমরা প্রতিদিন দুইবার করে পরীক্ষা করি। পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হলে আলাদা ল্যাব ও লোকবলের প্রয়োজন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ও হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
তবে নমুনা কয়েকদিন থাকলেও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি নেই জানিয়ে ডা. শিশির চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এখানে নমুনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে নষ্ট হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
প্রসঙ্গত, সিলেটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৫ এপ্রিল। এর দুদিন পর ৭ এপ্রিল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে শুরু হয় করোনার পরীক্ষা। প্রথমদিকে এই ল্যাবে পরীক্ষায় পজিটিভ রোগী কম মিললেও গত সপ্তাহ থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০৭ জনের।
সূত্র-জাগোনিউজ
Leave a Reply