ভয়ঙ্কর এক ছিনতাইকারীর নাম মির্জা আতিক। ছিনতাইকালে একটু বাধা পেলেই মানুষ খুন করতে তার বুক একটুও কাঁপে না। ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে দুই দফায় দুই যুবককে খুন করেছেন তিনি। এই দুই ঘটনার পর তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন আতিক।
মির্জা আতিকের অপরাধ কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রাত ১টার দিকে নগরীর কিন ব্রিজের দক্ষিণ পাশে ছিনতাইয়ের শিকার হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাহিদ আল সালাম। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহত মাহিদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন মির্জা আতিক। সেসময় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন তিনি। জেলে ছিলেন বেশ কয়েক মাস। কিন্তু তার চরিত্র বদলায়নি। দুই বছর পর আবারও একই রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন মির্জা আতিক। তার ছুরিকাঘাতেই গত মাসের ২৬ মে রাতে নগরের সুবিদবাজার এলাকায় খুন হন দোকান কর্মচারী আমির হোসেন (২৫)। দোকানের ডিউটি শেষে শহরতলির জালালাবাদ থানাধীন তেমুখী ইনাতাবাদ এলাকার সুলতান আহমদের ছেলে আমির বাসায় ফেরার সময় সুবিদবাজার এলাকায় হত্যার শিকার হন।
ক্লু-লেস নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যেও ছিনতাইকারী মির্জা আতিক। বুধবার (৩ জুন) বিকেলে আদালতে মির্জা আতিক ও তার সহযোগী আওলাদ হোসেন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলি এলাকা থেকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার আফতাবুল ইসলামের ছেলে মির্জা আতিককে আটক করা হয়। পুলিশের এ অভিযানে ছিলেন কোতোয়ালি থানা জোনের সহকারী কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম মিঞা, ওসি (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র, এসআই দেবাশীষ দেব ও মো. ইবাদুল্লাহ।
আতিকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় সুবিদবাজারের ছিনতাই ও খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক দক্ষিণ সুরমার সিলাম টিলাপাড়ার সামছু মিয়ার ছেলে আওলাদ হোসেনকে। জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত অটোরিকশা। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে মির্জা আতিক জানান, ২৬ মে রাতে নগরের সুবিদ বাজারের পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আমির হোসেনের বাইসাইকেলের গতিরোধ করেন তারা। এ সময় ছিনতাইয়ে বাধা দেন আমির হোসেন। আর বাধা পেয়ে ছুরিকাঘাত করেন মির্জা আতিক। পরে তারা জানতে পারেন ওসমানী হাসপাতালে নেয়ার পর আমির হোসেন মারা গেছেন।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিত হয় ছিনতাইকারীরাই আমির হোসেনকে হত্যা করেছে। পুলিশ যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে এর মধ্যে মির্জা আতিক আগেও ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মির্জা আতিকের সঙ্গে ছিনতাইয়ের এ সিন্ডিকেটে আরও যারা জড়িত আছে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে রাতে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে ছুরিকাঘাতে খুন হন আমির হোসেন (২৫)। পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে বাইসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন আমির হোসেন। তখন কয়েকজন যুবক তার পথরোধ করেন। তারা আমিরের বাম পায়ের উরুতে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে উদঘাটন করা না গেলেও তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিত হয় আমির হোসেন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। ছিনতাইকারীরাই তাকে হত্যা করেছে।
Leave a Reply