ডেইলি চিরন্তনঃ আমি যখন প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হতে যাই শাখাইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন আমার বয়স ছিলো ছয় বছর তখন একটা রিতি চালু ছিলো। বাচ্ছা যখন ডান হাত দিয়ে মাথার উপর দিয়ে হাত দিয়ে বাম কান পেলে স্কুলে ভর্তি নেওয়া হত। আমি ভর্তির সময় নাম ও লিখতে পারিনি কানও লাগাল পাইনি। কান লাগাল না পাওয়ার একটা কারন হল আমি খুব সু স্বাস্থ্য অধিকারী ছিলাম। যাক স্কুলে এই বছর আর ভর্তি হতে পারলাম না। আমার নানী আমাকে স্কুলে ভর্তি না করতে পারলেও দারুলউলুম চরমহল্লা আসাকাচর মাদ্রাসায় আওয়াল মানে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি ও পড়াশুনায় ভাল ছাত্র প্রথম শ্রেনীতে পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেনীতে মানে ক্লাস দমে আমার ক্লাস রোল ছিল এক। মাদ্রাসার শিক্ষক রা আমাকে অনেক ভালবাসতেন। মাদ্রাসা থেকে টুপি পাঞ্জাবী পায়জামা পেয়ে আরও পড়াশুনার আগ্রহ বেড়ে গেল। আমি ছোট বেলায় ছিলাম দুরন্ত সারা গ্রামে ঘুড়তাম খেলাধুলা করতাম। একদিন মারবেল খেলার জন্য মাদ্রাসায় যাইনি। পরের দিন গেলাম অনেক মার খেলাম। কেন মাদ্রাসা যাইনি একজন ক্লাসমিট বলে দিয়েছিলো আমি মারবেল খেলায় ছিলাম। তাই শিক্ষক অনেক মার দিয়েছিলেন পরের দিন অসুস্থ জন্য মাদ্রাসা যাইনি। শাস্তি এমন কঠিন ছিলো সুর্য দিকে তাকাইয়া এক পা দিয়া দাড়াইয়া থাকতে হবে এবং পা পড়ে গেলে বেত্রাঘাত করা হয়। আমি সহ্য করতে না পেরে জ্বর ওঠেছিল। ৪ চার দিন মাদ্রাসা যাইনি এই ভয়ে আবার মাদ্রাসা গেলাম না ১৫ পনের দিনের মতন। নানী মাদ্রাসা শিক্ষকের কাছে বুঝাইয়া দিয়ে আসলেন। দ্বিতীয় শ্রেনীতে পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময়। পরিবারে অশান্তি চলে আসে। যার পারিবারিক সমস্যা। আমার বড় ভাইকে একটা গ্রামে চাকুরীতে দেয়া হয়। সে অসুস্হ থাকার কারণে আমি তার পরবর্তী নানী আমাকে দিয়ে আসেন। আর পড়া লেখা করা যায়নি এভাবে তিন বছর চলে যায়। আমাকে আমার মা সিলেটে আমার খালাতো ভাই শফিকুল ইসলাম কেন্টিন চালাতেন রাগীব রাবেয়া হাসপাতালের। আমি তখন তার কেন্টিনে সার্ভিস দেই। একদিন এক ব্যক্তি চা খেতে এসে পরিচয় হয় আমার সাথে। আমাকে তিনি বললেন পড়াশোনা করো কি তুমি? বললাম দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে আর পড়তে পাড়িনি। পরে তার একটা স্কুলের কথা আমাকে জানান তিনি শিক্ষক ঐ স্কুলের। স্কুলে যাওয়ার জন্য মোবাইল নাম্বার দিয়ে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যান। একদিন শুক্রবার স্যারের সাথে দেখা করতে স্কুলে গেলাম। স্কুলে যাওয়ার পর দেখলাম অনেক ছাত্র গান,নাচ,আবৃত্তি করছে। অনেক সময় ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম। স্যার আমাকে বললেন তুমি পড়াশুনা করতে চাইলে আমাকে বলো আমি ভর্তি করে দিবো।
স্যারকে বললাম আমার খুব ইচ্ছে আছে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিলে আমি পড়ব। পরে স্যার আমার খালাতো ভাইয়ের সাথে আলাপ করে নিউহাম বেঙ্গলী কমিটি ট্রাস্ট পাঠানটুলায় ভর্তি করলেন। সারাদিন কাজ শেষে সন্ধার সময় ক্লাস করতাম। ক্লাসে গান কবিতা, আর ছবি আকা খুব ভাল লাগতো। আমি ক্লাসে সব বিভাগে প্রথম হলাম। আমার মেধা দেখে স্যার আমাকে তার বাসায় নিয়ে নিলেন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখেছি। তিনি রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এর অধ্যাপক ছিলেন। আর পাশাপাশি ঐ স্কুল বাচ্ছাদের ভিজিটর ছিলেন। আমাকে ভাল লেগে স্যার বললেন তুমি আমার সন্তানের মতন। আমার কাছেই থাকবা।
আমি তার ছেলেদের সাথে বড় হতে লাগলাম। পড়াশোনা করছি।তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় স্যার স্ট্রোক করে মারা গেলেন। আমি চলে আসলাম বাড়ীতে আমার জমানো ১৬০০ টাকা দিয়ে টং দোকান দিয়ে ব্যবস্যা শুরু করলাম। আমি আবারও পড়াশোনা শুরু করার ইচ্ছে করলাম। আমার নানী স্কুলে নিয়ে গেলেন শিক্ষক বললেন ওরে এই স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। যে স্কুলে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়েছিল ঐ স্কুল থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে।ভর্তি হতে না পেরে কান্নাকাটি করলাম। পরের দিন
আমার মামা হোসিয়ার আলী মেম্বার কে নিয়ে স্কুলে গেলাম।
আমার মামা কে ও শিক্ষক সেইম কথা বললেন। আমার মামা জুর দিয়ে বললেন আমার ভাগনাকে ভর্তি করতে হবে কোন মামলা মোকদ্দমা হলে আমি দেখব। পরে মামার কথায় আমাকে নীয়তি বালা দত্ত প্রধান শিক্ষক শাখাইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবারও তৃতীয় শ্রেণীতে বয়স কম কমিয়ে দিয়ে ভর্তি করলেন।
তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে খেলাধুলা ও পড়াশুনাশ মনযোগী হলাম। কাব স্কাউটের গ্রুপে নাম লিখালাম কাব শিক্ষক মুজিবুর রহমান স্যার কাছে। দীক্ষা নিলাম স্যারের কাছ থেকে। নবাগত শিক্ষিকা তৃষা্না পাল দিদি পড়াশুনা গাইড দিতেন।
আমি প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম নিজাম স্যারের কাছে তিনিও অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন আমাকে।
স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা দিলাম প্রথম পরীক্ষা তে তৃতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে প্রথম স্হান অধিকার করি। পড়াশোনা আরও আগ্রহ বেরে গেল। পাশাপাশি কাবিং চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রিয় শিক্ষক মুজিবুর রহমান স্যারের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা ক্যাম্পুরীতে শ্রেষ্ঠত্ব হয়ে ৬ ষষ্ঠ জাতীয় কাব ক্যাম্পুরীতে মৌচাক ঢাকা গাজীপুরে। গেলাম। ক্লাস ক্যাপটেন সব সময় ছিলাম। গ্রুপ লিডার ছিলাম। এভাবে নেতৃত্ব বিকাশ হতে লাগলো।
জাতীয় পর্যায় অনুস্টানে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথম সাক্ষাৎ টেলিভিশন দেই। প্রধানমন্ত্রী হাত থেকে পুরুষ্কার মেডেন সহ জাতীয় অর্জন হয়।
৫ম শ্রেনীতে বৃত্তি লাভ করি। শাখাইতি স্কুল থেকে শুধু আমি বৃত্তি পেলাম ঐ বছর।
৬ ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হলাম পাই গাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। স্কুলের মধ্যে পিটি ও স্কাউটিং চালু করি। ২৪ জনের টিম লিডার ছিলাম।
প্রিয় শিক্ষক দিগেন্দ্র বাবু তালুকদার, মোল্লা স্যার মুজিবুর রহমান ও সাহা স্যার খুব স্নেহ করতেন। এসএসসি পাশ করেই। জাউয়া বাজার কলেজ থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি।
ডিগ্রি তে মদন মহন কলেজ থেকে পাশ করি।
শিক্ষা জীবনে যা শিখেছি সৃজনশীল প্রতিভা, মানবিকতা,মানবতা,কল্যাণ জীবনে টাকা দিয়ে সব হয়না
শিক্ষা টাকা দুইটা বিপক্ষে কাজ করে।
জীবন কে যুদ্ধ হিসাবে চ্যালেন্জ হিসাবে গ্রহন করেছি। কোন জায়গাতে হারিনি আর হারতে চাই না। ২০১৩ সালে দিকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করি। অদ্যম সাহস দিয়ে মনোবল শক্ত করেই জীবন কে এগিয়ে নিচ্ছি।
২০১৭ সালের দিকে পদন্নোতি পেয়ে আজ নায়েক থেকে কাজ করে যাচ্চি। চাকুরী জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দিয়ে জয় করেছি। কখনও অন্যায়কে মেনে নেইনি প্রতিবাদ করেছি দুর্নীতি ও অনিয়ম বিরোধীতা করেছি। মানবিক কাজে ও সাংস্কৃতিক কাজ আমাকে খুব আনন্দ দেয়। সময় পেলে ছুটে যাই মানবতার পাশে।
মানুষের কল্যানে ও দেশের কল্যানে যে কোন সংকটে বাংলাদেশ এর পাশে আজীবন মানুষের পাশে থেকে কাজ করব। করোনা সংকট আমার সাদ্য মত চেষ্টা করেছি ত্রাণ, ও প্রচার অভিযান মানুষকে সতেতন করেছি। আমার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আজীবন কাজ করব। আর যুদ্ধ করব অনিয়ম ও দেশ বিরোধী কাজের। জীবনের প্রতিটি সময় মানুষের উপকার করে যেতে চাই।
জয় হুক মানবতার।
শিক্ষা দিন রাত্রি শিখছি নতুন কিছু জীবন পাট্য বই আমার জীবনের বড় শিক্ষা।
লেখকঃ এনামুল ইসলাম তালুকদার।
Leave a Reply