ডেইলি চিরন্তনঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এ দেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন, তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি। তার আগমন উপলক্ষে বিউগলের সুর বেজে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সংসদ কক্ষে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ডানপাশে রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত আসনে এসে দাঁড়ান মো. আবদুল হামিদ। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। জাতীয় সঙ্গীত শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি কালজয়ী ভাষণ ও তখনকার ভাষণ নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে জনাব স্পিকার বলে তার ভাষণ শুরু করেন। ৭টা ৩৫ মিনিটে ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণ শেষ করেন। ভাষণ শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর লেখা বইসমগ্র রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘জ্যোতি’ কবিতার কিছু অংশ পড়ে শোনান। ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়, তিমির বিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।’
এদিন প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল অফহোয়াইট জামদানি শাড়ি। আর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের ছিলেন। রাষ্ট্রপতি আসন নেয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেয়া ভাষণের ভিডিও সংসদ কক্ষে দেখানো হয়। এ সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা; কয়েকবার তাকে চোখ মুছতেও দেখা যায়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনী ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকী উদযাপন।’ তিনি বলেন, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ‘মুক্তির আলোকবর্তিকা’ হয়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে করেছেন ‘আলোকময়’। ‘তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সে লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’ দেশের সাধারণ মানুষকে যারা ‘বিভ্রান্ত করে’, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য।
‘মুজিববর্ষ’ পালনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে এবং বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের জন্য স্পিকার ও জাতীয় সংসদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। এ অধিবেশনের কার্যক্রম বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজš§কে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যখন সংসদ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেসব দিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭২ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতির ২২ নম্বর আদেশবলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়। ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম ‘গণপরিষদ’ অধিবেশন বসে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় এবং পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা সেই গণপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
সেই পরিষদের সদস্য হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণপরিষদের প্রধান দায়িত্ব ছিল দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা। কনিষ্ঠ ও নবীন সদস্য হিসেবে গণপরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ছিল আমার জন্য খুবই আগ্রহ ও আকর্ষণের। নিতান্ত নবীন সদস্য হিসেবে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সদস্যদের কর্মকাণ্ড খুবই আগ্রহভরে প্রত্যক্ষ করতাম। পার্লামেন্টারিয়ান বঙ্গবন্ধু তখন ছিলেন আমার আগ্রহের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে।
‘বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন। গণপরিষদে কোনো (প্রধান) বিরোধী দল ছিল না। বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র-সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা ১০-এ উন্নীত হয়নি। কিন্তু বিরোধী সদস্যরা প্রতিবাদমুখর ছিলেন, দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন। সংসদ অধিবেশন হতো প্রাণবন্ত। যুক্তিতর্ক ও মতামত উপস্থাপন ছিল খুবই আকর্ষণীয়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল সংসদে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও তার ভাষণ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, ন্যাপ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা। পার্লামেন্টে বক্তৃতা করার সুযোগ চাইলে সব সময়ই তিনি সুযোগ পেতেন। স্পিকার মাঝে মাঝে তাকে মাইক দিতে না চাইলেও বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘ওকে সুযোগ দিন, বিরোধী পক্ষের কথা আগে শুনতে হবে।’ সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শুধু যে আমাদের দলীয় সদস্য থেকে কমিটি করব তা নয়, দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হবে, জনগণকে যাতে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী একটা সুষ্ঠু সংবিধান দেয়া যায়, এই উদ্দেশ্যে সবার মতামত চাইব, এই সংবিধানে মানবিক অধিকার থাকবে, যে অধিকার মানুষ চিরজীবন ভোগ করতে পারবে।’ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টিই একেবারে সবকিছু চ‚ড়ান্ত করে নাই। দুই-একজন যারা নির্দলীয় বা বিরোধী পার্টি যাই বলুন, আমার কোনো আপত্তি নাই, যদি আপনাদের ভালো কোনো সংশোধনী থাকে, তা নিশ্চয়ই দেশের মঙ্গলের জন্য তা গ্রহণ করব।’
সেই সময়কার আইনপ্রণেতা আবদুল হামিদ বলেন, ‘সংসদে আরও একটা বিষয় ছিল লক্ষণীয়, পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে স্পিকার বিব্রত হতেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হতেন না। উদার না হলে, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন না হলে এটা ভাবাই যেত না। ১৯৭৩ সালের পার্লামেন্টে আতাউর রহমান খান, এমএন লারমাসহ বিরোধী দলের কয়েকজন এমপি ছিলেন। তখনও দেখেছি, তারা কথা বলতে চাইলেই সুযোগ পেতেন। প্রায় সময় বঙ্গবন্ধুই স্পিকারকে বলে সে সুযোগ করে দিতেন। বিরোধী দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা একটা মনোযোগ ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।’
জাতির পিতার জš§শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, আপামর জনগণের আর্থিক সহায়তার জন্য চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দেশের ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। সারা দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাব।’
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। ভাইরাসটি একবিংশ শতাব্দীর অপার সম্ভাবনাময় বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে মারাÍক হুমকির মুখে। করোনার প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। উন্নত বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে করোনায় আমরা অনেককে হারিয়েছি, যাদের মধ্যে রয়েছেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্সসহ নানা পেশা ও বয়সের মানুষ। করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ অর্থনীতির সব সেক্টরে।’
‘লকডাউনের’ বাস্তবতার কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, কোটি কোটি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় জীবনযাত্রায় নেমে এসেছিল অচলাবস্থা। সেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ দফা নির্দেশনা দেন এবং প্রতিনিয়ত ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, দিকনির্দেশনা দেন। তার এই সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য আমি আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যাতে সবাই পায়, সেজন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একক বা আঞ্চলিক ভিত্তিতে এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ভ্যাকসিন বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চল যাতে একই সময়ে ও সমভাবে পায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এটা জেনে তিনি আশাবাদী।
দীর্ঘ এক ঘণ্টার ভাষণে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এটি আমার জীবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জš§শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। এটি আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমি আপনার মাধ্যমে সংসদ নেতা ও সংসদ সদস্যসহ প্রিয় দেশবাসী এবং দেশের বাইরে বসবাসরত সব প্রবাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৩৮ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় হয় এবং প্রথম পরিচয়েই তিনি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমেই রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তারপর থেকে লেখাপড়া, রাজনীতি ও জনসেবা যুগপৎভাবে চলতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি ও পারিবারিক বন্ধন কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব সব সময়ই বঙ্গবন্ধুকে তার চলার পথে সাহস জুগিয়েছেন, বিপদে ভরসা দিয়েছেন। নিজের ও পরিবারের চেয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের অবদান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- ‘জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আমাদের আবাসভূমির নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, হবে বাংলাদেশ।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির আবেগ ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ যা ছিল মূলত স্বাধীনতারই ডাক। এই ভাষণের পর বাংলার ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সংসদ কার্যক্রমের পাশাপাশি দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারেও ছিলেন খুবই সচেতন।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনও চলমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a Reply