উত্তেজনার পারদ তরতর করে চড়ছে। সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ট্রান্স-তাসমান ফাইনাল বলে কথা। দুই প্রতিবেশী, দুই আয়োজক, টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের স্বপ্নের ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) রবিবাসরীয় ফাইনালের আগে দুদলের আগুনে ফর্ম ও নায়কদের নিয়ে কাটাছেঁড়া হওয়ার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সবকিছু ছাপিয়ে ফাইনালের ভেন্যু হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় চরিত্র। অবস্থা এমন যে অস্ট্রেলিয়া নয়, ফাইনালে যেন এমসিজির সঙ্গেই লড়তে হবে নিউজিল্যান্ডকে!
টানা আট ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। তবে আটটি ম্যাচই তারা খেলেছে ঘরের মাঠে, নিজেদের সমর্থকদের সামনে। এবার জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাচটা খেলতে হবে শত্রুর দুর্গে। কিউইদের জন্য কন্ডিশনের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ ভাবা হচ্ছে মাঠের আয়তনকে। নিজেদের দেশে ছোট মাঠে খেলে অভ্যস্ত ম্যাককালামরা। সেখানে এমসিজি বিশ্বের অন্যতম বড় মাঠ। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড খেলেছে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে। যেখানে বিশ্বকাপের চার ম্যাচে ৫৬টি ছক্কা হয়েছে। সমান ম্যাচে মেলবোর্ন দেখেছে মাত্র ১৯টি ছক্কা। লম্বা বাউন্ডারির জন্য ফাইনালে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে কিউইদের আগ্রাসী ব্যাটিং। ইডেন পার্কে যে শটে ছক্কা অবধারিত, মেলবোর্নে সেটা ক্যাচ হয়ে যেতে পারে।
প্রায় ছয় বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলবে নিউজিল্যান্ড। বৈরী কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার বেশি সময়ও পাচ্ছে না তারা। মেলবোর্নে সর্বশেষ ২০০৯ সালে খেলেছিল নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে এ মৌসুমেই এমসিজিতে গোটা কয়েক ম্যাচ খেলে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে এটাই ব্যবধান গড়ে দেবে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, কন্ডিশনের ভিন্নতা অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবে। এ গ্রীষ্মে এমসিজিতে আমরা নিয়মিত খেলছি। নিজেদের মাঠে যে কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত নিউজিল্যান্ড, তার চেয়ে এখানকার কন্ডিশন একদম ভিন্ন। এ বিশ্বকাপে ফর্মের দিক থেকে নিঃসন্দেহে সেরা দল নিউজিল্যান্ড, কিন্তু এমসিজিতে চ্যালেঞ্জটা কত কঠিন হবে তা ওরা নিজেরাও জানে। গ্রুপপর্বে অকল্যান্ডে কিউইদের কাছে এক উইকেটে হারার বদলাটা ফাইনালেই নিতে চান ক্লার্ক, ওই হারটা ছিল আশীর্বাদের মতো। আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে। তবে ধাক্কাটা আমরা ভুলিনি। ফাইনালে সেটা ফিরিয়ে দেব। গোটা দল প্রস্তুত।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে দেশে ফেরার বিমান ধরার আগে ভারত অধিনায়ক এমএস ধোনিও সতর্ক করে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডকে, ফাইনালে মাঠের আয়তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটাই হবে নিউজিল্যান্ডের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কন্ডিশন ও আয়তনের পাশাপাশি ৯০ হাজার দর্শকও হকচকিয়ে দিতে পারে কিউইদের। কিন্তু এসব নেতিবাচক আলোচনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না নিউজিল্যান্ড শিবির। আতংকিত হওয়ার বদলে মেলবোর্নকে স্বপ্নপূরণের মঞ্চ হিসেবে দেখছে
তারা। এমসিজিতে দাঁড়িয়েই কাল কিউই পেসার টিম সাউদি জানালেন, মাঠের আকার-আয়তন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। এটা আমাদের সবার জন্য স্বপ্নের এক ফাইনাল। বিশ্বের অন্যতম সেরা মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে পেরে আমরা রোমাঞ্চিত।
টেস্টে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ১৭টি সেঞ্চুরির মালিক ক্রোর এখন একটাই চাওয়া—বিশ্বকাপের শিরোপা, ‘অনেক কিউইর মতো আমিও একটা আশা নিয়ে তাসমান সাগর পেরিয়ে এখানে (মেলবোর্নে) এসেছি। ম্যাককালাম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এটাই আমাদের ক্রিকেট-ইতিহাসের সেরা সময়। নিউজিল্যান্ডের ৪০ লাখ মানুষ আত্মবিশ্বাসী, ওরা ১১ জন আমাদের অর্জনের আনন্দে ভাসিয়ে দিতে পারবে।’
মার্টিন ক্রোর লেখাটা পড়ে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ভীষণ অনুপ্রাণিত। বিশ্বকাপ চলার সময় দলে কিউই-কিংবদন্তিকে পাওয়ার কথা জানিয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, ‘কয়েক দিন আগে তিনি আমাদের দলের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন। সময়টা দারুণ কেটেছিল আমাদের। তিনি আমাদের দেশের বিরাট সম্পদ। তিনি এখন কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তিতে কাটবে।
Leave a Reply