ডেইলি চিরন্তনঃ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আজ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে এক উত্তাল জনসমুদ্রে এ দেশের স্বাধীনতার প্রস্তুতির ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বজ্রকণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই ভাষণ বাঙালির মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের এক মহাকাব্য। এই ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে উজ্জীবিত করে। দীর্ঘদিনের পরাধীনতার গ্লানি, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার মন্ত্র হিসেবে কাজ করে। ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে আপামর জনগণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বিজয়ী বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১ মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২ ও ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালন হয়। এই পটভূমিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ সোমবার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন করা হবে। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিকামী জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ওই ভাষণ ছিল এক মহামন্ত্র। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উত্সাহিত করে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আজ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। গত বছর আমরা এই মহাভাষণের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ বছর আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে—যাঁদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও দলের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নানা কর্মসূচি পালন করবে।
অন্যান্য কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আজ সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করবে।
নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’ বিকেল ৪ ঘটিকায় ঐতিহাসিক স্বাধীনতা উদ্যান সরোবরে ৫০০টি লাল-সবুজ কাগজের নৌকা ভাসাবে।
‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ আজ দুপুর ২টায় এক ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সকাল ৭টায় উপাচার্য বাসভবনসংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে জমায়েত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া দুপুর ১২টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাত্পর্য শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply