বিশ্বকাপ শেষ, কিন্তু কাটছে না তার রেশ। অন্তত অস্ট্রেলিয়ায়। উৎসবের মাতাল হাওয়ায় উন্মাতাল দক্ষিণ গোলার্ধের দেশটি। কাল মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কয়ারে বসেছিল চাঁদের হাট। সমর্থকদের সঙ্গে বিশ্বকাপ সাফল্য উদযাপন করেছেন ক্লার্করা। অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বিশ্বকাপজয়ী বীরদের কাছে পেয়ে সমর্থকরাও যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলেন! বিরামহীন উদযাপনে খেলোয়াড়দেরও কোনো ক্লান্তি নেই। রবিবাসরীয় ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই চলছে উৎসব। পরশু নৈশালোকে সবুজ ক্যানভাসে হলুদ জার্সি গায়ে মাঝরাত পর্যন্ত এমসিজি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। গ্যালারি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর ড্রেসিংরুমে হৈহল্লা শেষ করে মাঠের মধ্যে হয়েছে আরেক দফা শ্যাম্পেন উৎসব। গ্যালন-গ্যালন বিয়ার গিলেও যেন তৃষ্ণা মিটছে না ক্যাঙ্গারুদের! উৎসবের জনপদে এমন পাগলপারা উদযাপন সহজে থামছে না। বিদায়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক তো বলেই দিয়েছেন, ‘উৎসব চলছে, চলবে। সবাই সমানে গলা ভেজাচ্ছে। এখন তো আর ড্রাগ টেস্টে বসতে হবে না! কড়া উদযাপনে কোনো সমস্যা নেই।’ শিষ্যদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে গেছেন কোচ ড্যারেন লেম্যান। বেহিসাবি উদযাপনে তারও কোনো আপত্তি নেই, ‘সবাই আনন্দ করছে। এই উৎসব একদিনে শেষ হওয়ার নয়। এক সপ্তাহ ধরে আমরা এটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করব।’ মাঝরাতে হোটেলে ফিরে সকালেই আবার ফেডারেশন স্কয়ারে সমর্থকদের গণসংবর্ধনায় যোগ দেন খেলোয়াড়রা। বিশ্বকাপ ফাইনাল দিয়ে ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন ক্লার্ক। কাল উৎসবের মঞ্চে তার ডেপুটি ব্র্যাড হ্যাডিনও ওয়ানডেকে বিদায় জানিয়ে দিলেন। তাতে অবশ্য বিষাদের করুণ রাগিণী বেজে ওঠেনি। সময়টা যে উৎসবের।
মাইকেল ক্লার্ক ট্রফি হাতে হাজির হতেই করতালিতে ফেটে পড়ে জনতা। সমর্থকদের ভালোবাসায় আপ্লুত ক্লার্ক অনেকের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছেন। হাসিমুখে সই ও সেলফি শিকারিদের আবদার মিটিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। তবে ক্লার্কই ছিলেন উৎসবের মধ্যমণি। সাবেকদের পাশাপাশি অসি মিডিয়াও ক্লার্কদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ পত্রিকার শিরোনাম, ‘নিখুঁত অস্ট্রেলিয়ার হাতে পঞ্চম বিশ্বকাপ ট্রফি।’ ‘সিডনি টেলিগ্রাফ’ লিখেছে, ‘আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ক্লার্কের রূপকথার বিদায়।’ বিশ্বকাপজয়ী বীরদের কুর্নিশ জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রাইমমিনিস্টার ওয়ারেন ট্রুস বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি মানুষ তাদের জন্য গর্বিত। তারা চ্যাম্পিয়ন দল এবং চ্যাম্পিয়নদের দল। অস্ট্রেলিয়ার পতাকা সবচেয়ে উঁচুতে তুলে ধরেছে
তারা। ট্রফি, ম্যান অব দ্য ফাইনাল ও ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের সঙ্গে সবার হৃদয়ও জিতেছে তারা।’
প্রয়াত সতীর্থ ফিলিপ হিউজকে বিশ্বকাপ ট্রফি উৎসর্গ করে সমালোচকদেরও হৃদয় জিতে নিয়েছেন ক্লার্ক। ক্রিকেট লেখিয়ে রিচার্ড হিন্ডসের ভাষায়, ‘কোনো সাফল্যই হিউজকে হারানোর বেদনা মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে নির্দয় গ্রীষ্মে ক্লার্কদের বিশ্বকাপ জয়ই সেরা সান্ত্বনা।’ ওয়ানডে ছেড়ে টেস্ট র্যাংকিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এক নম্বরে নিয়ে যাওয়াই এখন ক্লার্কের মূল লক্ষ্য। ক্লার্ক ও হ্যাডিনের পর যে কোনো সময় ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন ওয়াটসন ও মিচেল জনসন। তাতে অবশ্য সংকটে পড়ার কথা নয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তারুণ্যই দলটির বড় শক্তি। ক্লার্কের সম্ভাব্য উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে যাকে, সেই স্টিভেন স্মিথ এরই মধ্যে দলের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। উত্তরসূরিদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎই দেখছেন ক্লার্ক, ‘বোর্ডার, ওয়াহ ও পন্টিংয়ের পর চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছি আমি। এটাই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ঐতিহ্য। পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি। তাই ওয়ানডে থেকে সরে গেলাম। এবার স্মিথদের দায়িত্ব অস্ট্রেলিয়াকে আরও ট্রফি এনে দেয়ার। আমি জানি, ওরা পারবে।’ ওয়েবসাইট
Leave a Reply