বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে স্পাইডার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়নি। ‘নো’ বল কিনা নিশ্চিত হতে তৃতীয় আম্পায়ারের সহায়তা নেননি মাঠের দুই আম্পায়ার। মাহমুদউল্লাহর আউটের ক্ষেত্রে ফিল্ডারের পা সীমানা দড়ি স্পর্শ করেছে কিনা, নিশ্চিত হতে ক্যামেরার ভিডিওচিত্র ‘জুম’ করে দেখনো হয়নি। মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে শুরু থেকেই ভারতের সমর্থনে স্লোগান লেখা দেখানো হয়।
বুধবার দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় আহম মুস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে প্রযুক্তির পুরোটা ব্যবহার করা হয়নি। তার কথায়, ‘বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। মাঠে গিয়ে দেখি, এই প্রথম খেলা হবে স্পাইডার ক্যামেরা বাদ দিয়ে। এরপর একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আসতে শুরু করল।’
১৯ মার্চ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় মাশরাফি মুর্তজার দল। ম্যাচের পরদিন আম্পায়ারিং নিয়ে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের ইনিংসের ৪০তম ওভারে ‘বিতর্কিত’ একটি সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড। ওভারের চতুর্থ বলটি ফুলটস দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন। বলটিতে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দেন ভারতের রোহিত শর্মা। তবে পাকিস্তানের আম্পায়ার দার বোলিংপ্রান্তে থাকা ইংল্যান্ডের আম্পায়ার গোল্ডকে বলটি কোমরের ওপরে ছিল বলে সংকেত দেন। গোল্ড তখন ‘নো’ ডাকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
সেই ম্যাচে সীমানায় শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। তালুবন্দি করার সময় ফিল্ডারের পা দড়ি স্পর্শ করেছে কিনা, নিশ্চিত হতে জুম ব্যবহার করা হয়নি। তার আউটে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়করা।
বাংলাদেশের ম্যাচে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির পুরো ব্যবহার না করায় বাংলাদেশে ফিরেও নিজের হতাশার কথা জানান কামাল। ‘আমি বলব না, এগুলো আম্পায়ারের ইচ্ছাকৃত ভুল, সেদিনও বলিনি। আম্পায়াররাও মানুষ, তাদেরও ভুলভ্রান্তি হয়। সেদিন যদি টেকনোলজি পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করতে পারতাম, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত কতটা সত্য, কতটা অসত্য- আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারতাম। আম্পায়ারিংয়ের মান সেদিন আরও ভালো হতো’, বলেছেন তিনি।
রুবেলের ‘নো’ বল নিয়ে মাঠের আম্পায়াররা তৃতীয় আম্পায়ারের সহায়তা চাননি। পরে এক বিবৃতিতে আইসিসির ‘নো’ বলের সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়টি ‘ফিফটি-ফিফটি’ বলে উল্লেখ করে। তবে কেন আম্পায়াররা টিভি রিপ্লে দেখতে চাননি, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিন আইসিসির নিয়ন্ত্রণে থাকে। খেলা চলার সময় সেখানে শুধু ভারতের পক্ষে স্লোগান দেখানোয় প্রতিবাদ জানান মুস্তফা কামাল।
‘জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা শুরুর পর ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’ (জিতবে ভাই জিতবে, ভারত জিতবে) দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে আইসিসির সিইওকে (ডেভিড রিচার্ডসন) বললাম, আপনি এটা বন্ধ করেন। তিনি কমার্শিয়াল ম্যানেজারকে বললেন বন্ধ করতে, কিন্তু বন্ধ হল না’, বলেছেন কামাল।
বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিংয়ের পর আইসিসির কড়া সমালোচনা করেন কামাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এখন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরই নামান্তর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তখন প্রয়োজনে পদত্যাগ করার কথাও জানান। দেশে ফিরে সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে অনিয়মগুলো বিস্তারিত জানালেন তিনি।
Leave a Reply