রাজধানীর শাহজাহানপুরে পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক আবু জাফর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দুই আসামি হলেন- শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই চার বছর বয়সী জিহাদ পাইপে পড়ে যায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত পুলিশের উপ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা প্রতিষ্ঠান এসআর হাউজ শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিস্থ মৈত্রী সংঘ মাঠের পূর্ব দক্ষিণ কোণে একটি পানির পাম্পের ঠিকাদারি নিয়ে অনুমান ৬০০ ফুট লোহার পানির পাইপ স্থাপন করে। কিন্তু পাইপের মুখ খোলা রেখে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। যার ফলে গত ২৬ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় মামলার বাদী নাসির উদ্দিনের ছেলে শিশু জিহাদ (৩) ওই স্থানে খেলা করতে গিয়ে পাইপের ভেতরে পড়ে মারা যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় শিশু জিহাদ পাইপের মধ্যে পড়ে গেলে মিডিয়ার মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাতভর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হয়। পরদিন দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান শিশুটি পাইপে নেই বলে ঘোষণা দিয়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করেন। এরপর শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ করেন জনৈক মজিদ, লিটু ও আনোয়ার। তাদের তৈরি একটি ক্যাচারের মাধ্যমে জিহাদকে টেনে তোলা হয়। এ নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে মানুষ।
জিহাদের বাবা নাসির ফকির ফৌজদারি আইনের ৩০৪/ক ধারায় ‘দায়িত্বে অবেহেলায়’ জিহাদের মৃত্যুর অভিযোগ এনে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। তাতে জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুস সালামকে আসামি করা হয়।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনার দিনই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জেএসআরকে করা হয় ‘কালো তালিকাভুক্ত’। ঠিকাদার সালাম গত ৮ মার্চ আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
Leave a Reply