পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬ বছর ক্রিকেটের কোন ফরমেটেই জয় ছিল না বাংলাদেশের। সেই দলকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। একটিমাত্র ম্যাচ পাল্টে দিয়েছে সব চিত্র। খুলে গেছে স্বপ্নের দরজা। শুক্রবার বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথমটিতে জয় পায়। তাই আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশর। মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আবারও মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। ৩৪তম ওয়ানডেতে তৃতীয় জয়টি তুলে নিতে পারলে বাংলাদেশ ঢুকে পড়বে নতুন ইতিহাসে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের জন্য বাড়বে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে অবনমনের ভয়। টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা মনে করেন দলের এখন যে সামর্থ্য তার ধারাবাহিকতা অবহ্যত থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ জয়ই নয় তাদের হোয়াইটওয়াশও করা যাবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে দারুণ একটি সুযোগ এসেছে। গতকালের ম্যাচটি পারফেক্ট ম্যাচ ছিল আমাদের জন্য। কোথাও বড় কোন ত্রুটি ছিল না। তবে বোলিংটা আরেকটু ভাল হতে পারতো। আমার মনে হয়, যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সেখানে দুদলই ৩০০-এর উপরে করতে পারতো। তবে প্রতি ম্যাচেই এ রকম খেলা সম্ভব নয়। এ রকম খেলতে পারলে যে কোন দলের বিপক্ষে যে কোন সময় জেতা সম্ভব; জেতা সম্ভব মানে জেতাই যায়। ইনশাআল্লাহ্ আগামীকালের (আজ) ম্যাচে যদি আমরা গতকালের মতো ভুল-ত্রুটি কম করে খেলতে পারি, জেতার সুযোগ থাকবে।’ বিশ্বকাপে স্লো ওভার রেটের কারণে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন অধিনায়ক। তবে আজ আবারও মাশরাফি খেলবেন। গতকাল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দলের কেউ অনুশীলন করেনি। কাটিয়েছেন হোটেলেই।
কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয় ও হোয়াইটওয়াশ করার বিষয়টি কি এতটাই সহজ হবে বাংলাদেশের জন্য? পাকিস্তান দল কি আসলেই নখদন্তহীন! বর্তমান পাকিস্তান দলের শক্তি নিয়ে বলেন, ‘এই পাকিস্তান দল আমার কাছে সাধারণ মানের মনে হয়নি; আমরা জিতেছি বলে নয়। ওদের যে বোলিং লাইন, বিশ্বকাপেও তা ছিল। আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপের চেয়ে এই বোলিং লাইন বেশি ভাল। ব্যাটিংয়ে মিসবাহ্ বা আহেমদ শেহজাদ নাই, এ ছাড়া আফ্রিদি নেই; আফ্রিদি অনেকবার আমাদের সঙ্গে গেইম চেঞ্জ করে দিয়েছে, এটা ঠিক। আমার মনে হয় একটা টিম যখন চেঞ্জ হয়, তখন সিনিয়রদের তো অবসর নিতেই হবে। আফ্রিদি বা মিসবাহ্ এক সময় অবসর নিতোই। এ কারণে ওদের দলে কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় আছে। নতুন খেলোয়াড় অবশ্য আমাদের দলেও আছে। একটা টিম গুছিয়ে নিতে কিছুদিন সময় তো লাগেই। ওরা শক্তির দিক থেকে কোনো অংশে কম নেই।’ অন্যদিকে পাকিস্তান দলে একের পর এক ইনজুরির ছোবল। গতকাল ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছেন এহসান আদিল। তার পরিবর্তে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে উমর গুলের।’ মূলত তারুণ্যনির্ভর পাকিস্তান দলকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ সিরিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাটা সেরে নিতে চাইছেন।
মাশরাফি আজ খেলবেন বলে দলে পরিবর্তনও আসবে। তাই প্রথম ম্যাচের উইনিং কম্বিনেশনটা আজ ভেঙে যাচ্ছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৯ রানের জয়ে বল হাতে ৩টি করে উইকেট নেয়া তাসকিন ও আরাফাত সানিই দলে থাকছেন। রুবেল হোসেন একটি উইকেট পেলেও বিশ্বকাপে দারুণ পারফরমেন্সের কারণে দলে থাকবেন। তাই আবুল হাসান রাজুকেই হয়তো জায়গা ছাড়তে হবে মাশরাফির জন্য। আজ দলের পরিবর্তনের বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আসলে ব্যাটিং অর্ডারের বিষয়টা এখন একটা সংখ্যা মাত্র। বিশ্বকাপে কোচ আমাদের তাই বলেছেন, আমরাও সেটি বিশ্বাস করি। দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলতে হবে। মানসিকভাবে সবাইকে সেভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সবাই এ চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। আল্লাহ্র রহমতে দলের ভারসাম্য খুব ভাল। সৌম্য ওপেন করাতে সবার ব্যাটিং অর্ডার এক ধাপ করে এগিয়ে গেছে। মুশফিকের দুই ধাপ এগিয়ে এসেছে। তো আসলে উইকেট-কন্ডিশন বিবেচনা করে টিম ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য অনেক কিছুই ছাড়তে হবে। আমার কাছে মনে হয় যে, খেলোয়াড়রা এখন সবকিছুই গ্রহণ করছে। আমাদের মতো দলের জন্য কখনও পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলতে হয় এ ধরনের উইকেটে। যখন বেশি ব্যাটসম্যান থাকে তখন বোলারদের ধৈর্য্য ধরতে হয়। এভাবেই সব কিছু মানিয়ে নিতে হবে। এখানে আসলে সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে সিরিজ জয় ও হোয়াইটওয়াশ প্রসঙ্গ উঠতেই এটিকে বাড়তি চাপ বলে অভিহিত করেন। মাশরাফি বলেন, ‘আসলে একটা জিনিস হয়ে গেছে যে, আমরা যখন দেশে খেলি এবং প্রথম ম্যাচ জিতে যাই, তখনই হোয়াইটওয়াশ বা বাংলাওয়াশ নিয়ে কথা ওঠে। এগুলো আমার কাছে মনে হয় অতিরিক্ত চাপ। আমরা কোনো সিরিজ খেলতে নামলে প্রত্যেকটি ম্যাচই জেতার চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য পরের ম্যাচটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় আপনারাও এ কথা আশা করছিলেন! এবং এটিই সত্যি কথা; পরের ম্যাচটি আমরা জিততে চাই। এটা জিতলেই আমরা সিরিজ জিতে যাবো। তারপরের ম্যাচেও নিশ্চয় আমরা হারের জন্য নামবো না। আপাতত পরের ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চাই
Leave a Reply